
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২৬ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। টানা ছয় মাস ধরে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাওয়ার ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। এ বছরের জানুয়ারির শুরু থেকেই প্রবাসী আয় বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল ইতিবাচক, যার ফলে মাস শেষে দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে রেমিট্যান্স। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮৬১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা দেশে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডির বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার হার বেড়েছে। অর্থ পাচার কমে যাওয়ার ফলে আগে হুন্ডির মাধ্যমে আসা অর্থ এখন আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসছে। এছাড়া, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে ডলারের দরের ব্যবধান এক টাকার মধ্যে সীমিত হওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী জানুয়ারি মাসে মোট ২১৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৫৫ কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৬৫ লাখ ডলার।
তবে জানুয়ারিতে আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি কমিউনিটি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের রেকর্ড হয়েছিল। ওই মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ৩১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার বেশি। এটি একক মাসে রেমিট্যান্সের দিক থেকে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
২০২৪ সালের পুরো বছরে শুধুমাত্র জুলাই মাস ছাড়া প্রতিটি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রবাসীরা কম হারে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। যদি ওই মাসেও স্বাভাবিক পরিমাণ রেমিট্যান্স আসত, তাহলে প্রথমবারের মতো পুরো বছরের প্রতিটি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড তৈরি হতো। ২০২৩ সালে মাত্র দুটি মাসে রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশে প্রবাসীরা মোট ১,৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছিল ১,০৮০ কোটি ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ইতোমধ্যে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাকি পাঁচ মাসে ৯ বিলিয়ন ডলার এলে একক অর্থবছরে রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে।
repoter