
ছবি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। ছবি : সংগৃহীত
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যকার সংঘর্ষ ও তাতে প্রাণহানির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি এই বিষয়ে কথা বলেন।
ভিডিও বার্তায় সারজিস আলম অভিযোগ করেন যে মাওলানা সাদের অনুসারীরা তাদের দাবি আদায়ে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং আলোচনার শর্ত লঙ্ঘন করেছে। তিনি জানান, সাদের অনুসারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি প্রতিনিধি দল তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে।
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় সাদের অনুসারীরা দুটি দাবি জানায়। প্রথমত, ভারতের মাওলানা সাদের ভিসা নিশ্চিত করা এবং দ্বিতীয়ত, ২০ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনের জন্য টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ তাদের বরাদ্দ দেওয়া।
সাদের অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে প্রতিনিধি দল মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার মধ্যরাতে কাকরাইল মসজিদে যায়। এই সময়েই তারা খবর পান যে সাদের অনুসারীরা ইজতেমা মাঠের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
সারজিস আলম বলেন, “এই খবর পেয়ে আমি সাদের অনুসারীদের ফোন করি। আমি তাদের স্পষ্টভাবে জানাই যে আলোচনা চলাকালে তারা যদি এমন কোনও পদক্ষেপ নেয়, তবে আমরা তাদের সঙ্গে থাকব না। কিন্তু তারা কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই মাঠ দখলের চেষ্টা চালায়। এর ফলে সংঘর্ষ বাঁধে এবং আমরা ৩-৪টি প্রাণ হারিয়েছি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে আলোচনার সময় সাদের অনুসারীরা পরিস্থিতিকে শান্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা মানেনি। আলোচনার সম্মান ও শর্ত ভঙ্গ করে তারা উগ্র পদক্ষেপ নিয়েছে, যা সংঘর্ষের মূল কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেন।
সারজিস আলম সাদের অনুসারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা আমাদের মতের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন। আলোচনার প্রতি কোনও সম্মান প্রদর্শন করেননি। একপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলাকালীন আপনারা যে আক্রমণ চালিয়েছেন এবং রক্তাক্ত ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য।”
ভিডিও বার্তায় সারজিস কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এটা যেন কেউ মনে না করে যে এই ধরনের সংঘর্ষের মাধ্যমে শহীদ হয়ে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব। আমাদের সবার বোঝা উচিত যে এমন সংঘর্ষ কোনও ধর্মীয় কর্তব্য বা সঠিক পথে চলার উদাহরণ হতে পারে না। বরং এটি সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর নামান্তর।”
শেষে সারজিস আলম এই সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমাদের সমাজে আর কোনও ধরনের সংঘর্ষ বা রক্তপাতের ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করা জরুরি।”
এই ভিডিও বার্তা সবার মধ্যে আলোড়ন তুলেছে এবং তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।
repoter