ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০২:৪৭ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ রবিবার * প্রতিযোগী না হয়ে প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতিই নিজেদের: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম * জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারদের পাশে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক * ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যাচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল * শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে রবিবার ঈদ উদযাপিত হবে * “বাংলাদেশ কোরআনের উর্বর ভূমি” — পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় ধর্ম উপদেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা * চা শ্রমিকদের পাশে সিলেটের ডিসি — দুর্দশায় ত্রাণ নিয়ে হাজির প্রশাসন * সাত বছর পর পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন করছেন খালেদা জিয়া * মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা * আগামীকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ২ ঘণ্টার লেনদেন

স্বৈরাচারী শাসনামলের নৃশংসতা নথিভুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ

repoter

প্রকাশিত: ১১:২৩:১৭অপরাহ্ন , ০২ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১১:২৩:১৭অপরাহ্ন , ০২ মার্চ ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত নৃশংসতার সঠিক নথিভুক্তির ওপর জোর দিয়েছেন। রোববার (২ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস এবং জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তরের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই দেশে জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল নৃশংসতার যথাযথ নথিভুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, শাপলা চত্বরে আন্দোলনকারীদের ওপর দমনপীড়ন, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের নিষ্ঠুরতা এবং বছরের পর বছর ধরে ঘটে যাওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলো সঠিকভাবে নথিভুক্ত করা জরুরি। তিনি বলেন, যদি এসব ঘটনার যথাযথ নথিভুক্তি না করা হয়, তাহলে সঠিক তথ্য জানা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

এ সময় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস বলেন, জনগণের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংসতার ঘটনাসমূহ যথাযথভাবে নথিভুক্ত করতে জাতিসংঘ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, এটি এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ এবং সত্য প্রতিষ্ঠার একটি প্রক্রিয়া।

২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে অনুসন্ধানীমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত খুশি যে জাতিসংঘ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটি প্রকাশ করা সহজ কাজ ছিল না, তবে যথা সময়ে এটি তারা প্রকাশ করেছে।

লুইস প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফোলকার তুর্ক আগামী ৫ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৫তম অধিবেশনে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ব্রিফ করবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে পুনরায় বৈশ্বিক মনোযোগে আনবেন, বিশেষ করে যখন এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা হ্রাস পাচ্ছে।

লুইস আরও বলেন, আমরা আর্থিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। প্রতি মাসে শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হয়, যা অন্যান্য মৌলিক চাহিদার সঙ্গে যুক্ত।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী ১৩ থেকে ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন। এই সফরে তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের এই আহ্বান বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের দিকে আলোকপাত করে। স্বৈরাচারী শাসনামলে সংঘটিত নৃশংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সঠিকভাবে নথিভুক্ত করা গেলে তা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সহায়ক হবে। এছাড়াও, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এ ধরনের নথিভুক্তি অপরিহার্য।

জাতিসংঘের সহযোগিতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র নৃশংসতার নথিভুক্তিই নয়, বরং মানবাধিকার রক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষই আশাবাদী যে, জাতিসংঘের সহযোগিতায় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়গুলো আলোর মুখ দেখবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।

প্রধান উপদেষ্টার এই উদ্যোগ এবং জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। এটি শুধুমাত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারভিত্তিক সমাজ গঠনের দিকেও একটি বড় পদক্ষেপ।

জাতিসংঘ মহাসচিবের আসন্ন সফর এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এটি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করাই নয়, বরং বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থানও সুদৃঢ় করবে।

এই প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্ব এবং জাতিসংঘের সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। এটি শুধুমাত্র অতীতের ভুলগুলো শুধরানোর সুযোগই নয়, বরং একটি উন্নত ও ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়ারও একটি বড় পদক্ষেপ

repoter