ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সুদমুক্ত ঋণের লোভ দেখিয়ে গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ করেছে স্থানীয় জনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রোববার (২৪ নভেম্বর) রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় ৩ শতাধিক নারী-পুরুষকে আটকের ঘটনা ঘটে।
এদের অনেকেই জানান, ঢাকায় একটি সমাবেশে যোগ দিলে ১ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা প্রথমে তাদের আটক করে এবং পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
গ্রেপ্তার অভিযানের বিবরণ
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থানার ওসি মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “সরকারকে বিব্রত করতে এবং ষড়যন্ত্রে ফেলার উদ্দেশ্যে একটি কুচক্রী মহল এসব মানুষকে ঢাকায় নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। স্থানীয় জনতার সহায়তায় ৪টি মাইক্রোবাস, ৫টি বড় বাস এবং ৩ শতাধিক নারী-পুরুষকে আটক করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১১ জনকে থানায় রাখা হয়েছে এবং বাকিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ চলছে।”
রামগতি থানার ওসি মো. কবির হোসেন জানান, “রাতের আঁধারে ২টি গাড়িসহ ৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রতারক চক্রের মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।”
আটককৃতদের বেশিরভাগই দিনমজুর, কৃষক, ও খেটে খাওয়া মানুষ। আটক থাকা ফরিদা বেগম, যার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চর মার্টিন, বলেন, “আমাকে উম্মে হানি নামের এক নারী ফর্ম পূরণ করতে বলে। ফর্ম পূরণ করার পর জানানো হয় যে ঢাকায় সমাবেশে গেলে ১ লাখ টাকা ঋণ পাবো, কোনো সুদ বা কিস্তি ছাড়াই।”
গাড়িতে থাকা আরেক ব্যক্তি, রাশেদ, জানান, “আমাদের বলা হয়েছে যে ঢাকায় সমাবেশ করলে সরকার থেকে ঋণ দেওয়া হবে। সেই আশাতেই যাচ্ছিলাম।”
শাহাবুদ্দিন নামের একজন বলেন, “দেড় মাস আগে ফর্ম পূরণ করেছি। এরপর মিজান নামের একজন ২টি মাইক্রোবাসে করে নারী-পুরুষ নিয়ে ঢাকায় রওনা হওয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু পথে আটক হয়ে যাই।”
করইতোলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. নুর আলম মোরশেদ বলেন, “অসংখ্য গাড়ি করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন মানুষজন। সন্দেহ হলে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের আটক করে পুলিশে খবর দিই। সবাই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের বলা হয়েছে, ঢাকায় সমাবেশ করলে সরকার ঋণ দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের প্রলোভন দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করা একটি ষড়যন্ত্রের অংশ।”
স্থানীয়দের মতে, এটি একটি সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র। এই চক্র রাতের আঁধারে সাধারণ মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমাবেশ করতে ব্যবহার করতে চাইছে।
কমলনগর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “এই চক্র সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালানোর জন্য নারী-পুরুষদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা তদন্ত করে দেখছি, কারা এই চক্রের মূল হোতা।”
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে আটকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের মূল পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
সাধারণ খেটে খাওয়া নারী-পুরুষদের এমনভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহার করা নিয়ে স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।
এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে পুঁজি করে তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে। তবে স্থানীয় জনতার সতর্কতামূলক তৎপরতায় একটি বড় ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে লক্ষ্মীপুরের মানুষ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও তদন্তের মাধ্যমে এ চক্রের মূল হোতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
repoter