
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সরকারি কর্মচারীদের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রথমবারের মতো গ্রেডভিত্তিক এই ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে কর্মচারীদের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি হারে এবং কর্মকর্তাদের জন্য কম হারে ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের খসড়া প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
১ থেকে ৩ গ্রেডে চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ, ৪ থেকে ১০ গ্রেডে ২০ শতাংশ, এবং ১১ থেকে ২০ গ্রেডে ২৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের প্রস্তাব রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে কর্মচারীদের সর্বনিম্ন ৪ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি পাবে। তবে মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হলে পূর্ববর্তী সরকারের প্রদত্ত ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা বাতিল হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যেই এই মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
মহার্ঘ ভাতা প্রদানের অর্থায়ন প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব খাতে ব্যয় কমিয়ে উন্নয়ন বাজেট থেকে এই অর্থের সংস্থান করা হবে। এর ফলে উন্নয়ন কার্যক্রমে কিছুটা কাটছাঁট হতে পারে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সর্বশেষ পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। এরপর থেকে কর্মচারীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। মূল্যস্ফীতি এবং কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় সরকার অবশেষে এই ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার মহার্ঘ ভাতা নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করেছিল। কমিটি মহার্ঘ ভাতার প্রয়োজনীয়তা এবং প্রযোজ্যতা যাচাই করে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের জন্য বেতন ও ভাতা বরাদ্দ করা হয়েছে ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। তবে বাজেটে মহার্ঘ ভাতার জন্য কোনো আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিচালন বাজেটের অন্যান্য খাত থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই ভাতার অর্থায়ন করা হবে।
জনপ্রশাসন সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী, যারা পেনশনে গেছেন তারাও এই মহার্ঘ ভাতার আওতায় আসবেন। এই ভাতা ইনক্রিমেন্টের সময় বেসিক বেতনের সঙ্গে যোগ হবে।
২০১৩ সালে সর্বশেষ ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করেছিল সরকার। সেই সময় সর্বোচ্চ ৬ হাজার এবং সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি পেয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালে শতভাগ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হলেও কার্যত এটি ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করলে তার প্রভাব বেসরকারি সেক্টরেও পড়তে পারে। তবে বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় সাধারণ জনগণের ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন থেকে মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই ভাতা প্রদানের ফলে কর্মচারীদের আর্থিক সুরক্ষা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে।
repoter