ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ০৫:৪৫ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* এডিবির গবেষণা: জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি * বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪: বাংলাদেশে মাঝারি মাত্রার ক্ষুধা * দুদকে যোগ দিলেন নতুন চেয়ারম্যান মোমেন * ব্যাংকে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমেছে * আয়েবার এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে ইউরোপ প্রবাসীদের জন্য সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে * খাগড়াছড়িতে অবৈধ ইটভাটা চালু করতে জালিয়াতি, হাইকোর্টের আদেশ পরিবর্তন * বাংলাদেশ দখলের হুমকি: পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা বললেন, "১৫ মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নেবে মুসলিমরা" * সরকারের ২২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত * ইউএনও’র ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে’ মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক: প্রত্যাহারের নির্দেশ * জাবি শিক্ষার্থীদের বাস আটকের প্রতিবাদ: অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে রাজধানী পরিবহনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

সরকারের ২২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত

repoter

প্রকাশিত: ০৯:২৯:৩০অপরাহ্ন , ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৯:২৯:৩০অপরাহ্ন , ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সরকার সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব থেকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল আমদানির জন্য পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কাউন্সিল কমিটির (এসিসিজিপি) ১৬তম সভায় এই প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিভিন্ন প্রস্তাবের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। এই উদ্যোগ দেশের জ্বালানি খাতকে আরও স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে।

প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী, মেসার্স ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড, সিঙ্গাপুর থেকে একটি কার্গো এলএনজি সংগ্রহ করা হবে। এই আমদানির জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৭০৮ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা, যা ভ্যাট এবং ট্যাক্সসহ। প্রতি একক এলএনজির দাম পড়বে ১৫ দশমিক ২ মার্কিন ডলার।

আরেক প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ২০২৫ সালের জন্য আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডিএনওসি) থেকে ৬ লাখ টন মুরবান গ্রেডের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সংগ্রহ করবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২০৮ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা।

এছাড়া, সৌদি আরবিয়ান অয়েল কোম্পানি (সৌদি আরামকো) থেকে ৭ লাখ টন অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড (এএলসি) গ্রেডের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সংগ্রহের প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে। এ প্রস্তাবের জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ২৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।

অন্য একটি প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে পরিশোধিত জ্বালানি তেল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তেলের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৭১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

জ্বালানি সংগ্রহের জন্য এই প্রস্তাবগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। প্যাকেজ ‘এ’-তে সিঙ্গাপুরের ইউনিপেক সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড, প্যাকেজ ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ই’-তে ভাইটাল এশিয়া পিটিই লিমিটেড এবং প্যাকেজ ‘ডি’-তে দুবাইয়ের ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করবে।

ড. সালেহউদ্দিন জানান, এই উদ্যোগ দেশের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সহায়তা করবে। জ্বালানি তেলের এই আমদানি দেশের শিল্প, পরিবহন এবং বিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের জ্বালানি খাতের অবকাঠামো আরও শক্তিশালী হবে এবং আমদানি নির্ভরশীলতায় আরও স্বচ্ছতা আসবে। এ ধরনের উদ্যোগগুলো ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদে সহায়ক হবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এমন উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে তারা এও সতর্ক করেছেন যে, এই বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে যথাযথ স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হবে। এতে দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্য রয়েছে।

অন্যদিকে, এই প্রকল্পের ফলে সম্ভাব্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণে জনগণের উপর চাপ আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, আমদানির খরচ কমিয়ে আনতে এবং দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের পরিকল্পনা করা উচিত।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই আমদানির ফলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতের কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে তারা এও বলেছেন যে, এই প্রক্রিয়ায় যেন কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি খাতকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছে। দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করাও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা।

যদিও এই উদ্যোগ অনেকের কাছে প্রশংসনীয় বলে মনে হচ্ছে, তবে এর সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

repoter