
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
রাজনৈতিক সহিংসতা, কোভিড মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের প্রাথমিক স্তরের ৫৫.২ শতাংশ শিশু ভীত বা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গণসাক্ষরতা অভিযান এবং ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় আরও জানা যায়, ৩৬.৯ শতাংশ শিশু স্কুলমুখী হওয়ার আগ্রহ হারিয়েছে।
গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
গবেষণার তথ্যমতে, শিক্ষার্থীদের ৩৬.৫ শতাংশ পড়ালেখায় অমনোযোগী, ২৮.৬ শতাংশ মানসিক ক্ষতির শিকার এবং ৭.৯ শতাংশ খিটখিটে মেজাজের লক্ষণ প্রদর্শন করছে।
জরিপটি দেশের আটটি বিভাগের ২০৩টি সহযোগী সংগঠনের সহায়তায় পরিচালিত হয়। অংশগ্রহণকারী শিশুদের অভিভাবক, শিক্ষক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত সংগ্রহ করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা, স্কুল বন্ধ থাকা, এবং শিক্ষার্থীদের রাস্তায় মিছিল-সহিংসতা দেখার কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রমা, বিষণ্ণতা, হতাশা, এবং একাকীত্ব বোধের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি বাড়ছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিজ্ঞতার আলোকে জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, শিশুদের স্বাভাবিক সামাজিক চঞ্চলতা হারিয়ে যাচ্ছে এবং ঘুমের সমস্যা ও দুঃস্বপ্নের মতো সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সভায় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, “শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন অপরিহার্য। এই প্রস্তাবগুলো আমরা সরকারের কাছে তুলে ধরব, যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।”
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারির আগে শিক্ষাক্রম সংস্কারে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়নি। এই ত্রুটির প্রভাব শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পড়েছে। শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।”
সভায় প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও খেলাধুলার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। শিক্ষক নেতা শাহিনূর আল আমিন স্কুলে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। অন্যদিকে শিক্ষক নেতা আবুল কাশেম বলেন, “যেসব স্কুলে খেলার মাঠ নেই, সেগুলোর জমি সংস্কার করে খেলার মাঠ তৈরি করতে হবে।”
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানান, এ মাসেই ১০টি দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় উদ্বোধন করা হবে। নতুনভাবে সাজানো এই বিদ্যালয়গুলো শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সভায় বক্তারা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দেন। তারা বলেন, শিশুর মানসিক বিকাশ এবং স্কুলমুখী করার জন্য পরিবার, বিদ্যালয় এবং সমাজের সমন্বিত ভূমিকা প্রয়োজন।
repoter