
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সিরিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে। মাত্র ১২ দিনের অপ্রতিরোধ্য অভিযানে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি মুক্ত হলো বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসন থেকে। দীর্ঘ এক দশকের গৃহযুদ্ধ শেষে এই পরিবর্তন দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছে।
২৭ নভেম্বর সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোতে বিদ্রোহীরা প্রথম আক্রমণ শুরু করে। এক সপ্তাহের মধ্যে তারা শহরের অধিকাংশ অংশ দখল করে নেয়। ১ ডিসেম্বর আলেপ্পোর কুর্দি যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু অঞ্চল ছাড়া পুরো শহর তাদের দখলে চলে আসে। বিদ্রোহীরা এরপর হামা এবং হোমস শহরেও একই গতিতে অভিযান চালায়। ৫ ডিসেম্বর সিরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর হামা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে আসে। মাত্র দুই দিন পর, ৭ ডিসেম্বর, তারা রাজধানী দামেস্ক ঘেরাও করার অভিযান শুরু করে।
আজ, ৮ ডিসেম্বর, বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কের পূর্ণ দখল নেয়ার ঘোষণা দেয়। ভোরের দিকে রাজধানী থেকে ব্যক্তিগত বিমানে করে পালিয়ে যান বাশার আল-আসাদ। তবে তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত তথ্য জানা যায়নি।
দামেস্কে বিদ্রোহীদের বিজয়ের খবরে সিরিয়ার রাস্তাগুলোতে উদযাপনের ঢল নেমেছে। বিদ্রোহীরা এই ঘটনাকে “আসাদ মুক্ত নতুন সিরিয়ার সূচনা” হিসেবে অভিহিত করেছে। বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর কমান্ডাররা জানিয়েছেন, দেশটিতে আর কখনো স্বৈরশাসনের জায়গা হবে না।
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা এক বিবৃতিতে জানায়, “বাথিস্ট শাসনের অধীনে ৫০ বছরের নিপীড়ন এবং ১৩ বছরের সংঘাত ও অত্যাচারের পর আমরা আজ একটি নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করছি। এটি আমাদের জাতির জন্য শান্তি, ন্যায়বিচার, এবং মর্যাদার যুগ।”
এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিদ্রোহী নেতারা শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন। হায়াত তাহরির আল-শামের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে আত্মসমর্পণকারী সেনাদের প্রতি মানবিক আচরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
দীর্ঘ সময় আসাদের শাসন টিকিয়ে রাখতে রাশিয়া এবং ইরানের মতো শক্তিশালী মিত্রদের সমর্থন ছিল। তবে বিদ্রোহীদের এই অভূতপূর্ব অভিযানের সময় তাদের কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি। বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
বিদ্রোহীদের দাবি, নতুন সরকার এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা রক্ষা পাবে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হবে। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন সিরিয়া হবে ন্যায়বিচারের প্রতীক।
সিরিয়ার জনগণ আশা করছে, এই পরিবর্তন দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে দেশের ভবিষ্যৎকে একটি স্থিতিশীল পথে পরিচালিত করবে। বিদ্রোহীদের এই সাফল্য দেশটির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
repoter