
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
কলকাতা: বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় চিরবিদায় নিলেন। ‘আমি বাংলায় গান গাই’ খ্যাত এই শিল্পী ৮৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি এবং শেষ পর্যন্ত কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, যা তার স্বাস্থ্যের অবনতি নির্দেশ করছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকা সত্ত্বেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। সপ্তাহখানেক আগে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে জানা যায়, তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। সব ধরনের চিকিৎসা প্রয়াস সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয়নি, এবং বাংলা গণসঙ্গীতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বিদায় নিলেন।
প্রতুল মুখোপাধ্যায় ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে ভারতে চলে যান তিনি। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ। নিজের লেখা গানে সুর দিয়ে সংগীতচর্চা শুরু করেন। তার কালজয়ী গান ‘আমি বাংলায় গান গাই’ ২০১১ সালের মার্চে প্রকাশিত হয়, যা অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বাংলা গানের জগতে এক অনন্য স্থান অর্জন করে।
তার সৃষ্টির মধ্যে ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’, ‘যেতে হবে’, ‘ওঠো হে, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’, ‘তোমাকে দেখেছিলাম’, ‘স্বপনপুরে’, ‘অনেক নতুন বন্ধু হোক’, ‘হযবরল’, ‘দুই কানুর উপাখ্যান’, ‘আঁধার নামে’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য অ্যালবাম রয়েছে। তার গান শুধু বিনোদন নয়, বরং সমাজের নানা দিককে প্রতিফলিত করে গণসঙ্গীতের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
তার প্রয়াণে সংগীত জগতে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য এটি এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলার মাটিতে তার গান যুগ যুগ ধরে শ্রোতাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে, তার সৃষ্টিশীলতা এবং সংগ্রামী চেতনা মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
repoter