
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার এবং বেঁচে ফেরা সেনা কর্মকর্তারা অভিযুক্ত বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিদ্রোহে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্তদের নিরপরাধ বলার কোনো সুযোগ নেই, এবং তাদের মুক্তির দাবি সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস মাত্র।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান খানের মেয়ে ডা. ফাবলিহা বুশরা। তিনি বলেন, বিডিআর কোর্টের রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের ত্যাগকে অসম্মান করা এবং সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত বিপথগামী জওয়ানদের নির্দোষ প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই, এবং তাদের মুক্তির দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্তদের দ্রুত সাজা কার্যকরের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন তদন্তে বিদ্রোহে জওয়ানদের সরাসরি সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ ও সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে। বিডিআর কোর্ট এবং সিভিল আদালত অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের পিলখানার হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিকে উড়িয়ে দিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা
শাস্তি দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় প্রায় পাঁচ হাজার বিডিআর সদস্য ছিল, এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রায় চার হাজার অস্ত্র ছিল। তারা খুব দ্রুত অস্ত্রাগার লুট করে বিদ্রোহ সংঘটিত করে এবং সেনা কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এসময় বিদ্রোহ শুধু পিলখানাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, সারা দেশের বিভিন্ন রাইফেল ব্যাটালিয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল।
ডা. ফাবলিহা বুশরা বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচার অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘ সময় ধরে পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন কিছু আইনজীবী মামলায় যুক্ত হয়েছেন, যারা এ বিষয়ে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ নন। তাই, তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করে মামলার যথাযথ পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সাজাপ্রাপ্ত সৈনিক ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো দাবি তোলা হয়নি, কিন্তু হঠাৎ করে এখন তারা আন্দোলন করে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। তিনি অভিযোগ করেন, এ ধরনের আন্দোলনের মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে এবং সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান অ্যাডভোকেট সাকিব রহমানসহ অন্য শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং বেঁচে ফেরা একাধিক সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই সর্বসম্মতিক্রমে দোষীদের সাজা কার্যকর করার দাবি জানান এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি রোধ করার আহ্বান জানান।
repoter