
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন এক যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। প্লাস্টিক বোতলের পানির বিকল্প হিসেবে দ্বীপের মানুষের জন্য টেকসই উপায়ে খাবার পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ও বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
দ্বীপের পরিবেশ দূষণ হ্রাস এবং প্রবালসহ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই প্রকল্পকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় বৃষ্টির পানি, ভূগর্ভস্থ পানি এবং পৃষ্ঠস্থ পানি পরিশোধন করে বাসিন্দাদের সরবরাহ করা হবে। বিশেষ কার্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে এ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে, যেখানে গ্রহীতারা প্রয়োজনমতো নির্ধারিত মূল্য দিয়ে পানি নিতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর জানিয়েছেন, পানির মান নিরীক্ষার জন্য দ্বীপে একটি বিশেষ ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে। এছাড়াও পরিবেশবান্ধব অপারেশন বিল্ডিং এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দু’টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন। দ্বীপে প্রতিদিনের মানুষ্য বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য এবং প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য আধুনিক প্লাজমা রিয়েক্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশে তৃতীয় প্রকল্প।
বর্তমানে সেন্টমার্টিনে ১৭০০ পরিবারের প্রায় ৮ হাজার মানুষের পাশাপাশি পর্যটন মৌসুমে দৈনিক ২ হাজার পর্যটকের কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এই প্রকল্পটি সেসব বর্জ্যকে যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
টেন্ডারের মাধ্যমে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান—টার্ণ বিল্ডার্স, গ্রীণ ডট লিমিটেড এবং ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড—এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। প্রকল্পটি আগামী জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টার্ণ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি নাহিদ আল হাসান জানিয়েছেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পর কাজ শুরু করতে মালামাল পরিবহনের কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও সেগুলো দ্রুত সমাধান করা হবে।
পরিবেশবিদরা মনে করছেন, এই প্রকল্প দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় ১৯৯৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর একে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দ্বীপ সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সরকারের এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। শীতকালীন পর্যটন মৌসুমে দৈনিক ২ হাজার পর্যটক নির্ধারণ করা হয়েছে এবং রাতযাপন সীমিত করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
প্রকল্পটি সফল হলে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
repoter