ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০২:৫৯ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ রবিবার * প্রতিযোগী না হয়ে প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতিই নিজেদের: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম * জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারদের পাশে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক * ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যাচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল * শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে রবিবার ঈদ উদযাপিত হবে * “বাংলাদেশ কোরআনের উর্বর ভূমি” — পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় ধর্ম উপদেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা * চা শ্রমিকদের পাশে সিলেটের ডিসি — দুর্দশায় ত্রাণ নিয়ে হাজির প্রশাসন * সাত বছর পর পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন করছেন খালেদা জিয়া * মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা * আগামীকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ২ ঘণ্টার লেনদেন

শেখ হাসিনার আমলে চীনের ব্যবসায়িক সুবিধা: বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ ও ঠিকাদারিতে বড় ভূমিকা

repoter

প্রকাশিত: ০৭:০৬:৩৯অপরাহ্ন , ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

আপডেট: ০৭:০৬:৩৯অপরাহ্ন , ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের ব্যবসায়িক প্রভাব গত দেড় দশকে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ২০০৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অস্বীকারযোগ্য। মোট ৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ঋণ ও ঠিকাদারি কাজের মধ্যে চীন উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন শেষে এসব প্রকল্পে আয় কম থাকায় পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বেরিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের কোষাগার থেকে।

শেখ হাসিনার সরকার চীনের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশটির কাছ থেকে বড় ঋণ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে সড়ক, রেলওয়ে, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য অবকাঠামো খাতে চীনের অর্থায়নে একাধিক প্রকল্প চলছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে বড় ভূমিকা পালন করেছে চীন। উদাহরণস্বরূপ, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ এবং কর্ণফুলী টানেলের মতো বিশাল প্রকল্পগুলো চীনের ঋণে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এত বড় প্রকল্প নেওয়ার পরেও বাংলাদেশ যে সুফল পাচ্ছে না, তা অনেক বিশ্লেষক দাবি করেছেন। বিশেষত, এসব প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় একে উপযোগীভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। চীনের ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করছে, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম জানান, চীনের ঋণ নিয়ে দুর্নীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি, যা প্রভাব ফেলেছে প্রকল্পগুলোর মূল্যায়নে। চীনের সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট পদ্ধতির কারণে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা অতিরিক্ত ব্যয় বাড়িয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম টানেল প্রকল্পটি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ অর্থই চীনা ঋণ। কিন্তু চালুর পর এক বছরে প্রকল্পটি কেবল ৩৭ কোটি টাকা আয় করেছে, যেখানে বছরে পরিচালনার জন্য ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রকল্পটি প্রায় ১০০ কোটি টাকার লোকসান দিচ্ছে।

অন্যদিকে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা, যেখানে ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তবে, রেল চলাচল শুরু হলেও আয় এখনও ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য যথেষ্ট নয়। এভাবে, বাংলাদেশের জন্য যেসব প্রকল্প লাভজনক হওয়ার কথা ছিল, তা এখন বিপুল আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এসব প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদি উপকারিতা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য, কিন্তু বর্তমান সুশাসনের অভাব এবং প্রয়োজনীয় মূল্যায়নের অভাবে সেগুলোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এসব প্রকল্প গ্রহণের সময় প্রয়োজনের চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা পরে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, চীনসহ যেকোনো দাতার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হলে জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে দরকষাকষি করা উচিত। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে না পারলে, ঋণ ও সহায়তার পরিমাণ শুধু ব্যবসায়িক সুবিধা দেবে, যা দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি চীন সফর করে ঋণের সুদহার কমানো এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তবে, চীনের ঋণের সুদ হার তুলনামূলকভাবে কম বলে তিনি উল্লেখ করেন, তবে তিনি আশ্বাস পেয়েছেন যে যদি সম্ভব হয়, চীন সুদহার কিছুটা কমানোর চেষ্টা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ যদি সঠিক মূল্যায়ন ও দিকনির্দেশনা দিয়ে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করতো, তাহলে দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি উপকারিতা আনা সম্ভব ছিল। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি দেখিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশে প্রকল্প গ্রহণের সময় সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতির সুযোগ দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের সঙ্গে আরও নতুন প্রকল্পের দিকে নজর দেওয়া উচিত, তবে যেসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা বা দুর্নীতি মূলে নয়, সেগুলোই বাংলাদেশের জন্য উপকারী হতে পারে।

repoter