
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
গত অর্থবছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাইকেল রপ্তানির আয় তলানিতে নেমে গিয়েছিল, তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে সাইকেল রপ্তানি অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের বাজারে পরিবেশবান্ধব বাইসাইকেলের চাহিদা বাড়ার কারণে বাংলাদেশের বাইসাইকেল রপ্তানি এখন আগের মতোই বাড়ছে। ব্রিটেন, জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাইকেল রপ্তানি হচ্ছে, তবে সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাজ্য ও জার্মানি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশ ৪ কোটি ২৩ লাখ ডলার মূল্যের সাইকেল রপ্তানি করেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সাইকেল রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
বিশেষভাবে নভেম্বর মাসে সাইকেল রপ্তানির আয় ১৫৭ শতাংশ বেড়ে ৯০ লাখ ২০ হাজার ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের নভেম্বর মাসে ছিল ৩৫ লাখ ১০ হাজার ডলার।
গত কয়েক বছরে সাইকেল রপ্তানি খাতটি নানান সংকটের মুখে পড়লেও বর্তমানে এটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় অর্থনীতি সংকটে পড়েছিল এবং বাইসাইকেলের রপ্তানি কমে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সাইকেল রপ্তানি পুনরায় বাড়ছে।
বাংলাদেশের দুটি প্রধান প্রতিষ্ঠান, মেঘনা গ্রুপ এবং প্রাণ-আরএফএল এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, বাইসাইকেল রপ্তানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সুমন বলেন, রপ্তানি বাড়াতে তারা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং গত অর্থবছরের তুলনায় ২৫-৩০ শতাংশ বেশি রপ্তানি করতে আশা করছেন।
রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের বছরে ৯ লাখ বাইসাইকেল তৈরির সক্ষমতা রয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপে রপ্তানি করা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যানভিত্তিক সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৃতীয় এবং বিশ্বের অষ্টম বাইসাইকেল রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশের বাইসাইকেলের ৮০ শতাংশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে রপ্তানি করা হয়, বাকিটা যায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কিছু দেশে।
বাংলাদেশে তৈরি বাইসাইকেল বিশেষত ফ্রিস্টাইল, মাউন্টেন ট্রেকিং, ফ্লোডিং, চপার, রোড রেসিং এবং টেন্ডমেড (দুজনে চালাতে হয়) মডেলের বাইসাইকেল রপ্তানি হচ্ছে। সাইকেল তৈরির জন্য বেশ কিছু যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে তৈরি হলেও, কিছু যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
ইউরোপীয় বাজারে বাইসাইকেল রপ্তানির শীর্ষে আছে তাইওয়ান এবং পরবর্তীতে আছে থাইল্যান্ড। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পরিবেশবান্ধব যানবাহনের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে, যা বাইসাইকেলের চাহিদা বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপে প্রতিবছর তিন কোটি সাইকেল বিক্রি হবে, যা বর্তমানে বিক্রিত পরিমাণের চেয়ে এক কোটি বেশি হবে। এটি বাংলাদেশের জন্য আরও বড় সুযোগ তৈরি করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
repoter