
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বাস্তবায়িত ‘হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়)’ প্রকল্পে অনিয়মের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। এই প্রকল্পে পরস্পরের যোগসাজশে স্ক্রুড স্টিল পাইল (এসএসপি) ব্যবহারের শর্ত আরোপ এবং পরবর্তীতে তা বিলোপের মাধ্যমে সরকারের ১২৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানা গেছে।
২০১৭ সালে প্রকল্প, মন্ত্রণালয়, জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রচলিত পাইলিং পদ্ধতির পরিবর্তে স্ক্রুড স্টিল পাইল (এসএসপি) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভূমির ফিজিক্যাল কন্ডিশন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই সুপারিশ করা হলেও বাস্তবে কোনো একচুয়াল টেস্ট করা হয়নি। পরবর্তীতে দরপত্রে এসএসপি ব্যবহারের শর্ত আরোপ করে একটি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দরদাতাকে কাজ দেয়ার পথ সুগম করা হয়।
দরপত্র মূল্যায়নে টেকনিক্যাল ইভ্যালুয়েশন কমিটি (টিইসি) একক দরদাতা মেসার্স এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)-কে কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশ করে। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাদের লেটার অব এক্সেপ্টেন্স প্রদান করা হয় এবং ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির চার মাস পূর্বে প্রকল্পের সুপারভাইজরি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়েই লি: বেবিচককে পত্রের মাধ্যমে জানায় যে, এসএসপি পদ্ধতি বাংলাদেশের মাটির জন্য উপযুক্ত নয়। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চুক্তি স্বাক্ষরের আগে এসএসপি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেনি।
স্ক্রুড স্টিল পাইলের পরিবর্তে প্রকল্পে শেষ পর্যন্ত বোরড পাইল ব্যবহার করা হয়। ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে চুক্তিমূল্য কমিয়ে ধরা হলেও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ অনুসারে অমিশন কস্ট বাবদ ঠিকাদারকে ১২৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
অডিট প্রতিবেদন অনুসারে, চুক্তির এ পরিবর্তন ও ১২৫ কোটি টাকা পরিশোধের পেছনে দুর্নীতির উদ্দেশ্য ছিল। প্রাথমিক অডিট আপত্তিতে রাষ্ট্রের এই আর্থিক ক্ষতি চিহ্নিত হয়েছে। বেবিচক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অর্থদাতা সংস্থা জাইকা এই অনিয়ম সম্পর্কে অবগত থাকলেও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, দরপত্র শর্তে এসএসপি ব্যবহারের নিয়ম আরোপ করে প্রতিযোগিতা সীমিত করার মাধ্যমে কাজটি একটি নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে সেই শর্ত বাদ দিয়ে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি সত্ত্বেও এ বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
repoter