ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০৩:৫৩ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্তে বিলম্বের আড়ালে রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক অনিয়ম

repoter

প্রকাশিত: ০৭:২৭:৫৯পূর্বাহ্ন, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫

আপডেট: ০৭:২৭:৫৯পূর্বাহ্ন, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

২০১৬ সালে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাইবার চুরির একটি নজির। এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। প্রায় এক মাস পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে এলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চুরির ৩৯ দিন পর ঢাকার মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ বিভাগের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গ্রহণ করে, যা আইনি দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ।

সিআইডির তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানসহ ১৩ জন কর্মকর্তার গাফিলতি ও জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন থেকে তাদের নাম বাদ দিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সিআইডিকে চাপ দেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়। এমনকি সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মন্ত্রীদের একাধিক বৈঠক হয়। অভিযোগপত্রে অভিযুক্তদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সিআইডি রাজি না হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব ঘটে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরের পর অর্থ তিনটি ক্যাসিনোতে স্থানান্তর করা হয়। পরে ফিলিপাইন সরকার দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে ফেরত দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনও উদ্ধার হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক চুরির ঘটনার পরদিনই তা জানতে পারলেও বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ৩৩তম দিনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে এবং ৩৯তম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা করা হয়। মামলায় অর্থ চুরি, আত্মসাৎ, জালিয়াতি এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। তদন্তকালে সিআইডি ফিলিপাইন, ভারত এবং বাংলাদেশ থেকে অপরাধীদের বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করে এবং একটি অভিযোগপত্র তৈরি করে। তবে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও অভিযোগপত্র প্রকাশ করা হয়নি।

সিআইডির তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্তদের মধ্যে তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক, যুগ্ম পরিচালক এবং উপপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন অবসরে গেছেন এবং কয়েকজন পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি গভর্নর হয়েছেন। ৩৮ দিন আগে রহস্যজনকভাবে নিহত ফিলিপাইনের পরামর্শক এডিসন জভেল্লানোসের বিষয়টিও তদন্তে উঠে আসে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য প্রযুক্তি প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন অনুযায়ী, এই মামলার তদন্ত করার এখতিয়ার কেবল দুদকের রয়েছে। তবুও সিআইডিকে দিয়ে তদন্ত করানো হয়, যা আইন বহির্ভূত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কারণ এটি সরকারের প্রভাবাধীন সংস্থা এবং দুদকের মতো স্বাধীন নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সিআইডিকে তদন্ত প্রভাবিত করার চাপ দেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হলেও তা আদালতে জমা না দেওয়া এবং প্রভাবশালী মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বর্তমান গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং মামলার তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছেন। তারা মনে করেন, মামলার তদন্ত দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে যাতে আলামত নষ্ট হয়ে অপরাধীরা আইনের আওতার বাইরে থাকে।

repoter