
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, বায়ুদূষণ রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। তবে এর কারণে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ কমাতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, ঢাকায় মানুষ বায়ুদূষণের কারণে অসুস্থ হবে, মারা যাবে আর যানবাহনগুলো দূষণ করবে—এটা আর সহ্য করা হবে না।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, বায়ুদূষণের মতো জটিল সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। ২০১৫ সাল থেকে এ বিষয়ে আদালতে লড়াই করে আসার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। জনদুর্ভোগ কমাতে নতুনভাবে গঠিত একটি টাস্কফোর্সকে বেশ কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ধুলো, গাড়ির কালো ধোঁয়া, ইটভাটা ও স্টিল মিলের দূষণ কমানোর চেষ্টা চলছে। রাস্তার ধুলো নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে রোড ডিভাইডার এবং রাস্তার পাশের অনাবৃত স্থানে ঘাস লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার পর ধুলো এক জায়গায় ফেলে রাখা হলে তা আবার গাড়ির চাকা দিয়ে পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এটি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, আশুলিয়ার ইটভাটাগুলোর ধোঁয়া ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। আশুলিয়াকে নো ব্রিক ফিল্ড জোন ঘোষণা করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ধুলা কমানোর জন্য নিয়মিত পানি ছিটানো হবে, যদিও এটি বায়ুদূষণ সরাসরি কমায় না।
তিনি বলেন, বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাদের সামর্থ্য রয়েছে, তাদের জন্য বাসায় এয়ার পিউরিফায়ার রাখার কথাও বলা হয়েছে। এ পণ্যের উচ্চমূল্য কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ট্যাক্স হ্রাসের অনুরোধ জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে এয়ার পিউরিফায়ার ক্রয় সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি সড়ক পরিবহন সেক্টরের শৃঙ্খলা ফেরানো এবং যানজট নিরসনের জন্য একাধিক পদক্ষেপের কথা জানান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, বাস মালিক সমিতির নেতারা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগের পাশাপাশি শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণেও নজর দেওয়া হচ্ছে। রাস্তা মেরামত এবং যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত পার্কিং ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থে ঢাকার সাধারণ বাসিন্দাদের বায়ুদূষণের শিকার হতে দেওয়া হবে না।
repoter