
ছবি: রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিজিএসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় | ছবি: সিজিএসের ফেসবুক পেজ
রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পুলিশের সংস্কার কার্যকর হবে না বলে মত দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত “গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ” শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।
সংলাপে অধিকারের পরিচালক এএসএম নাসিরুদ্দিন এলান বলেন, গত ১৫ বছরে পুলিশের দ্বারা যেসব নির্যাতন হয়েছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো সেসব তথ্য তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, শুধুমাত্র গত তিন মাসে নয়জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জন নির্যাতনে এবং তিনজন গুলিতে মারা গেছেন। এছাড়া, বর্তমানে যে মামলাগুলো হচ্ছে, সেগুলোর বেশিরভাগে নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পীস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, কেবল পুলিশ নয়, সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিশনের সিদ্ধান্তে সমর্থন দিতে হবে। পুলিশের কাজের তদারকি এবং তাদের প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের ওপর জোর দেন তিনি।
সাবেক আইজিপি এম এনামুল হক বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের অন্যায় আদেশের বিরুদ্ধে পুলিশকে সাহসী হতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করা হলেও এর সুপারিশ কার্যকর হয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং পুলিশের সাথে সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন সাবেক বিচারপতি ইকতেদার আহমেদ। তিনি বলেন, অতীতে সরকারগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারকদের নিয়োগ দিয়েছে, যা সাংবিধানিক নীতির পরিপন্থী।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, দেশের পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশের কাজ হলো সেবা প্রদান করা, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ক্ষমতা রক্ষার জন্য পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে।
আরেক সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পুলিশকে হেনস্তাকারী সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি পুলিশের পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। একইসাথে, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সুশাসনের অভাব সবচেয়ে বড় ত্রুটি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রম অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যা জনগণের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, পুলিশের সংস্কার কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। তিনি বলেন, জনগণের দাবি এবং অধিকার বাস্তবায়নে পুলিশকে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে হবে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট রাশনা ইমাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, এবং সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান। বক্তারা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের সংস্কারকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে চিহ্নিত করেন।
repoter