
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমধর্মী ড্রোন শো, যা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আমাদের জাতির ইতিহাসের গর্বিত মুহূর্তগুলো। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া এই ড্রোন শো-এর আয়োজন করা হয় ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায়।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল সংসদ ভবন এলাকায় একটি পরীক্ষামূলক ড্রোন শো অনুষ্ঠিত হয়। সেই রাতের দৃশ্য শেয়ার করেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ও খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, যিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে কিছু ছবি পোস্ট করেন।
সোমবারের মূল আয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তির আলো-ছায়ার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়—বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য সব মুহূর্ত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চিত্র, শহীদ আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো দৃশ্য, মুগ্ধর পানি বিতরণের আইকনিক মুহূর্ত—সবকিছুই ফুটিয়ে তোলা হয় আকাশজুড়ে উড়ন্ত ড্রোনের আলোয়।
শো’টিতে সময়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নানা সময়ের প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়। ‘২৪-এর বীর’ শিরোনামে তৈরি প্রতীকচিত্রে উঠে আসে সময়ের সাহসী মানুষেরা। ‘পায়রার খাঁচা ভাঙা’ থিমে তুলে ধরা হয় গণমুক্তির আকাঙ্ক্ষা, দেখানো হয় ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে একটি প্রার্থনার প্রতীকী দৃশ্য। পাশাপাশি ফুটে ওঠে বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের শুভেচ্ছাবার্তা।
এই ড্রোন শোতে স্থান পায় চলমান রাজনীতির প্রতিফলনও। প্রতীকীভাবে তুলে ধরা হয় জুলাই আন্দোলনের প্রসঙ্গ, গণঅভ্যুত্থানের চিত্র, এবং শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দাবিতে সাম্প্রতিক ছাত্র ও জনতার প্রতিবাদ।
ড্রোন শো’র আগে বিকাল ৩টা থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে শুরু হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বর্ণাঢ্য এক কনসার্ট। সেখানে গান, নাচ আর আনন্দে মেতে ওঠে রাজধানীবাসী। তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে মুখর ছিল সারা এলাকা। গান-বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে সকলে উদযাপন করেছে বাংলা নববর্ষের নতুন দিনকে।
পহেলা বৈশাখের এই আয়োজন শুধু উৎসব নয়, ছিল ইতিহাস স্মরণ এবং জাতির সামগ্রিক চেতনার পুনরুত্থান। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতিহাস ও বর্তমানকে একসাথে তুলে ধরে এই ড্রোন শো প্রমাণ করেছে, স্মৃতি ও স্বপ্ন—দুয়েরই জায়গা আছে আমাদের আকাশে।
repoter