
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
পৌষের মধ্যভাগে তীব্র শীতের আগমনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। দিনের শুরু থেকেই ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে শীত অনুভূত হয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর তা রূপ নেয় হাড় কাঁপানো শীতে। শুক্রবার সকালেও ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে শীত আরও বাড়তে পারে। ৭ থেকে ৯ জানুয়ারির মধ্যে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে বলে জানানো হয়েছে। তবে এ মাসের মধ্যভাগে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলার খেটে খাওয়া মানুষেরা তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করছেন। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়া এই অঞ্চলে গত কয়েক দিন ধরেই সূর্যের দেখা মিলছে না। একই অবস্থা পঞ্চগড় ও রংপুর অঞ্চলেও।
রংপুরে গত দু’দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা শীতবস্ত্রের অভাবে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের কারণে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জেও শীতের প্রকোপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই দুই জেলার মানুষ কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকায় শীতের অনুভূতি বাড়ছে।
বরিশালেও গত দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। মেঘলা আকাশ আর ঘন কুয়াশার কারণে তীব্র ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ফুটপাতের গরম পোশাকের দোকানে ভিড় বাড়লেও নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রয়োজন মেটাতে তা যথেষ্ট নয়।
টাঙ্গাইল, নওগাঁ, এবং মাদারীপুরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। টাঙ্গাইলে উত্তরের হিমেল বাতাসে শ্রমজীবী মানুষেরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। নওগাঁয় হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদারীপুরে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসনগুলো শীতার্তদের সহায়তায় কম্বল ও অর্থ বরাদ্দ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। বেসরকারি সহায়তাও এখন পর্যন্ত তেমন কার্যকর হয়নি। শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র মানুষেরা পুরোনো কাপড়ের দোকানে ভিড় করছেন।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে দেশে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।
শীতের এই তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে ছিন্নমূল, দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষেরা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র এবং জরুরি সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
repoter