ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০২:৫৮ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ রবিবার * প্রতিযোগী না হয়ে প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতিই নিজেদের: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম * জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারদের পাশে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক * ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যাচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল * শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে রবিবার ঈদ উদযাপিত হবে * “বাংলাদেশ কোরআনের উর্বর ভূমি” — পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় ধর্ম উপদেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা * চা শ্রমিকদের পাশে সিলেটের ডিসি — দুর্দশায় ত্রাণ নিয়ে হাজির প্রশাসন * সাত বছর পর পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন করছেন খালেদা জিয়া * মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা * আগামীকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ২ ঘণ্টার লেনদেন

পৌষের আগেই জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত

repoter

প্রকাশিত: ১১:১১:১৫অপরাহ্ন , ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১১:১১:১৫অপরাহ্ন , ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

ফাইল ছবি

ছবি: ফাইল ছবি

পৌষের শীত আসার আগেই দেশজুড়ে বইতে শুরু করেছে তীব্র শীতের দাপট। উত্তরের হিমেল বাতাসের সাথে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে গ্রামের জনপদ থেকে শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো। শীতের তীব্রতায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, চরম ভোগান্তির শিকার। গ্রামাঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন হতদরিদ্র মানুষ।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই দিন রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ করে শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের চেম্বারগুলোতে রোগীদের লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে।

কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে দেশের বিভিন্ন নদীপথে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার মধ্যে ফেরি চলাচল বুধবার রাত ৩টা থেকে বন্ধ থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে কুয়াশা কমার পর ফেরি চলাচল পুনরায় শুরু হয়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি পড়ে যায়, যার কারণে যানবাহনের চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রকোপ

কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, এবং হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে শীতের তীব্রতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কুড়িগ্রামের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, চরাঞ্চলের মানুষজন শীতবস্ত্রের অভাবে ভীষণ কষ্টে আছেন। এখনো পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পৌঁছায়নি।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দিনের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করেছে। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার সারা দিনই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকার কারণে সূর্যের দেখা মেলেনি। এখানকার মানুষজন শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে গরম কাপড় কিনতে ভিড় করছেন দোকানে। তবে যারা সামর্থ্যহীন, তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

চা বাগান ও পাহাড়ি এলাকায় শীতের তীব্রতা

মৌলভীবাজারের চা বাগান অধ্যুষিত কমলগঞ্জ উপজেলায়ও শীতের প্রকোপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে দিনের পর দিন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে চারপাশ। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটেও। এখানকার চা বাগান এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।

চুনারুঘাটের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা জানান, শীতজনিত বিভিন্ন রোগ যেমন সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ও শ্বাসকষ্টের কারণে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন।

যানবাহন চলাচলে সমস্যা

শেরপুর জেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। রাতে এবং সকালে কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেশি যে দূরপাল্লার গাড়িগুলোর যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

রাজধানীতে কুয়াশার ঘনত্ব

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশায় ঢাকা ছিল। দুপুরে কিছুটা কমলেও বিকেল থেকে আবার ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায়। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, পরবর্তী কয়েকদিন কুয়াশার ঘনত্ব আরও বাড়তে পারে।

শীতবস্ত্রের অভাব

গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও শীতবস্ত্রের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। বরিশালের আগৈলঝাড়ার মতো এলাকাগুলোতে এখনো পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা পৌঁছায়নি। ফলে হতদরিদ্র মানুষজন প্রচণ্ড শীতের সাথে যুদ্ধ করে দিন কাটাচ্ছেন।

জনজীবনে স্থবিরতা

সারাদেশে শীতের কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দিনমজুর এবং খেটে খাওয়া মানুষজনের কাজে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও সূর্যের অনুপস্থিতি জনজীবনে ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের হিমেল বাতাস এবং ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। সরকারি সহায়তা এবং স্থানীয় উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানানো হয়েছে।

দেশজুড়ে শীতের প্রকোপ যেমন সাধারণ মানুষের জীবনে অসুবিধা সৃষ্টি করেছে, তেমনই শীতজনিত রোগের প্রকোপ বাড়াচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে দ্রুততম সময়ে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।

repoter