ছবি: টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির পয়েন্টগুলোয় প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষের ভিড় ছবি: ফাইল
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনো অর্থনীতির পুনর্গঠনে দৃশ্যমান কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারেনি। শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া বাজেট ও অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে, যা জনমুখী পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।
মূল সমস্যাগুলো
মূল্যস্ফীতি ও তারল্য সংকট:
- ১০ শতাংশ নীতি সুদহারে বৃদ্ধি সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে ১০.৮৭% এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২.৬৬%-এ পৌঁছেছে।
- ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে তারল্য সংকট গভীরতর হয়েছে, যার ফলে শিল্প খাতের কর্মসংস্থান ও উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
রাজস্ব ও মুদ্রানীতি:
- বাজেটে রাজস্ব ঘাটতির জন্য বিদেশী ও দেশী ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হয়েছে।
- কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল থাকায় বৈষম্যমূলক নীতি অব্যাহত রয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের সংকট:
- বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার ফলে সাময়িক স্থিতিশীলতা এলেও আমানতকারীদের আস্থা ফেরানো সম্ভব হয়নি।
- বিদেশি ব্যাংকগুলো বিপুল মুনাফা করলেও দেশীয় ব্যাংকগুলো মাফিয়া কার্যকলাপ ও দুর্নীতির কারণে সংকটে পড়েছে।
সরবরাহ ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা:
- শুল্ক ছাড়ের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।
সামাজিক খাতে অবহেলা:
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
- জনকল্যাণমূলক ব্যয় বৃদ্ধির উদ্যোগ এখনও অদৃশ্য।
জনগণের প্রত্যাশা বনাম বাস্তবতা
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল—
- মুদ্রানীতিতে দৃশ্যমান সংস্কার,
- বিদ্যুৎ, গ্যাস, ও পানির মূল্য কমানো,
- দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, এবং
- অর্থনীতিকে সুষম উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়া।
তবে প্রথম ১০০ দিনে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং সংকুচিত মুদ্রানীতি এবং সংকটময় রাজস্ব কাঠামো অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
সম্ভাব্য সমাধান ও সুপারিশ
- অর্থনৈতিক দর্শনের পরিবর্তন: জনগণের জন্য সরাসরি কল্যাণকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
- ব্যাংক খাতের সংস্কার: পরিচালন পরিষদের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং দুর্নীতি দমন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
- সামাজিক খাতে বিনিয়োগ: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা উচিত।
- পরিকল্পিত ব্যয়: অত্যাবশ্যকীয় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে।
- মুদ্রানীতিতে ভারসাম্য আনা: সংকুচিত মুদ্রানীতির পাশাপাশি সম্প্রসারিত রাজস্ব নীতি গ্রহণ করতে হবে।
repoter