
ছবি: File photo
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার রূপসা ও কাজিবাছা নদী এলাকায় চলছে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের মহোৎসব। বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৩ লাখ টাকায়, অথচ সেই বালু থেকে বছরে আড়াই কোটি টাকারও বেশি মুনাফা তুলছেন ব্যবসায়ীরা। নদী তীর থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে ড্রেজার বসিয়ে নির্বিচারে বালু তোলার ফলে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বসতভিটা, ও মৎস্য ঘের।
নদী তীরবর্তী এলাকায় তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না তারা। দক্ষিণ তেঁতুলতলা, কচুবুনিয়া, ও পূর্ণের খেয়া গ্রামের মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। এই অব্যবস্থার মধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এসব বাঁধ মেরামতের কিছুদিনের মধ্যেই তা ধসে পড়ছে। স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে পাউবো ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।
জেলা প্রশাসন রূপসা ব্রিজ থেকে চালনা পূর্বপাশ পর্যন্ত একমাত্র সরকারি বালুমহাল ইজারা দেয় মাত্র ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকায়। যদিও কাগজে-কলমে ইজারাদার হিসেবে আলী রেজা হায়দারের নাম রয়েছে, প্রকৃতপক্ষে এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর বালুমহালটির দখল চলে যায় বিএনপির হাতে। বর্তমান ইজারাদাররা নিয়ম ভেঙে যেখানে-সেখানে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন।
অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীরে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। এই গর্তে ধসে পড়ছে তীর রক্ষা বাঁধ। বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের তিন কিলোমিটার নদীতীর ইতিমধ্যেই ভাঙনের কবলে পড়েছে। নদীতে বিলীন হয়েছে শত শত বিঘা জমি, ঘরবাড়ি, ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো ইতিমধ্যে ১৩ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যার বেশিরভাগ কাজ ধসে পড়েছে। এমনকি নতুন করে ফেলা জিও ব্যাগও কার্যকর হচ্ছে না।
পাউবোর কর্মকর্তারা বলেছেন, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে তীর রক্ষায় ব্যয় করা অর্থ বৃথা যাবে। তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সমাধান মেলেনি। স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ শাওন জানিয়েছেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট জোন ঠিক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে পরিবেশকর্মীরা মনে করেন, সমন্বয়ের অভাব এবং দায়সারা ব্যবস্থাপনার কারণে প্রকৃত সমাধান সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, মানুষের জীবিকা ও প্রকৃতি রক্ষায় বালু উত্তোলনের নীতিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। জেলা প্রশাসন এবং পাউবোর মধ্যে সমন্বয় করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সরকারের অর্থ ও প্রাকৃতিক সম্পদ উভয়ই অপচয় হতে থাকবে।
খুলনার জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
repoter