
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। এই দলটির প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে জুলাই-আগস্ট মাসের গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতা ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সক্রিয় অংশগ্রহণ। নতুন এই দলের নেতৃত্বে থাকবেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যিনি সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে দল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সারজিস আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষায় নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ ও লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে, তা সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধ করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা চাই, আগামী প্রজন্ম একটি উন্নত, ন্যায়সংগত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ পাক, আর সেই লক্ষ্যেই আমরা এই লড়াই চালিয়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। সেই ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের এই উদ্যোগ নতুন এক রাজনৈতিক ধারা তৈরি করবে, যা সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, নতুন এই রাজনৈতিক দল মূলত তরুণদের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এবং দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন নিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন ও ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাজ করবে। বিভিন্ন আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ও জনগণের চাহিদার প্রতিফলন ঘটিয়ে এই দলটি তার নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন করবে।
এই ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নতুন দলের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। তারা মনে করছেন, সাম্প্রতিককালে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সাধারণ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তার মধ্যেই এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। অনেকেই ধারণা করছেন, তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত এই দলটি প্রচলিত রাজনীতির ধারা থেকে সরে এসে নতুন কৌশল ও দর্শন নিয়ে কাজ করবে।
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। দেশজুড়ে সাধারণ জনগণ, বিশেষত তরুণ সমাজ, এই নতুন রাজনৈতিক শক্তির কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অনেকে মনে করছেন, এই দলটির উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা কারও প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে রাজনীতিতে আসছি না, বরং আমরা জনগণের স্বার্থ রক্ষায় একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। যেখানে দলীয় স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং জনগণের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমাদের রাজনৈতিক দর্শন হবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সমতা ভিত্তিক।’
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা, এই নতুন উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন এবং অনেকেই এই দলে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন এই দলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই নতুন রাজনৈতিক শক্তির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের পর তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি, আদর্শ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী হতে পারে, তা জানতে সবার দৃষ্টি থাকবে ২৮ ফেব্রুয়ারির ঘোষণার দিকে।
repoter