ছবি: সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১২,৫০০ টাকা। [ফাইল ছবি]
শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ক্ষমতা ও মোবাইল কোর্ট চায় নিম্নতম মজুরি বোর্ড
নিম্নতম মজুরি বোর্ড, দেশের একমাত্র সংবিধিবদ্ধ মজুরি নির্ধারণকারী সরকারি সংস্থা, সম্প্রতি আইন সংশোধনের মাধ্যমে মজুরি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধিক ক্ষমতা চেয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে সংস্থাটি তাদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে, যেখানে সরাসরি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতাসহ কারখানায় পরিদর্শনের সুযোগ চাওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের মজুরি নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় তদারকি নিশ্চিত করা। শ্রম আইন অনুযায়ী, বোর্ডের কাজ মূলত নিয়োগকর্তা ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মজুরি নির্ধারণ করা। তবে বিদ্যমান আইনে মজুরি বোর্ডের কর্মকর্তাদের কারখানা পরিদর্শন ও তদারকি করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বোর্ডটি সরাসরি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা চেয়ে দুটি ধারা সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবিত ধারা ১৪৯(৪)-এর মাধ্যমে বোর্ড চেয়ারম্যানকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও অভিযোগের ভিত্তিতে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করতে চাওয়া হয়েছে।
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ জানান, কারখানাগুলোতে মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন তদারকির দায়িত্ব পরিদর্শন অধিদপ্তরের। কিন্তু তদারকির ঘাটতির কারণে অনেক সময় শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনেক মালিক এ মজুরি কাঠামো অনুসরণ করেন না, যা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। এ সমস্যা নিরসনে বোর্ড সরাসরি তদারকি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা চাচ্ছে। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মজুরি কাঠামো ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ মূল বেতনসহ অন্যান্য সুবিধায় বিভক্ত। বর্তমানে সরকার পোশাক শিল্পে সর্বনিম্ন মজুরি ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা আগের ৮,০০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে, অনেক শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে ২৫,০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বর্তমান মজুরি কাঠামো মানানসই নয়।
বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ মনে করেন, শ্রম আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় সমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রমিকদের নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য বর্তমানে কোনো সুরক্ষা নেই, যা তাদের জীবনযাপন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। নিম্নতম মজুরি বোর্ড শ্রম আইনে আরও কিছু ধারা সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে। ধারা ১৪৯(৩) অনুযায়ী, বোর্ডকে ব্যক্তিমালিকানাধীন কারখানা সরজমিনে পরিদর্শন ও তদারকির ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ধারা ১৩৮ (৫)-এ সংশোধন আনার মাধ্যমে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে জুডিশিয়াল সার্ভিসের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বা অবসরপ্রাপ্ত জজদের নিয়োগের প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিম্নতম মজুরি বোর্ড তাদের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার জন্য জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। সচিব রাইসা আফরোজ জানান, বর্তমানে ৪৬টি সেক্টরে বোর্ড কাজ করছে, যা পরিচালনায় জনবলের অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সংস্থাটি শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের এ পদক্ষেপ শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
repoter