
ছবি: ফাইল ছবি
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। এর ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এবং শনিবার থেকেই নতুন ভ্যাট ও শুল্কহার কার্যকর হবে।
নতুন কর-শুল্কের আওতায় আসবে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, রেস্তোরাঁর খাবার, মিষ্টি, টিস্যু, আঙুর, আপেল, তরমুজ, তৈরি পোশাক, হোটেল ভাড়া, চশমা ইত্যাদি। এর মধ্যে বেশ কিছু পণ্যের ওপর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রেস্তোরাঁ, বিস্কুট, কেক, আচার, টমেটো সস, কাপড়, দর্জির দোকান, ন্যাপকিন, মিষ্টি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, নন-এসি হোটেল এবং মোটর ওয়ার্কশপের মতো পণ্যে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়াও, বৈদ্যুতিক খুঁটি, স্টিলের কোল্ড রোল্ড কয়েল, চুনাপাথর, ডলোমাইটসহ বেশ কিছু শিল্পপণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ওষুধের ওপর ভ্যাটও ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে, ফলে বাণিজ্যিক পর্যায়ে ওষুধের দাম বেড়ে যাবে।
ভ্যাট বাড়ানোর ফলে মুদ্রণ, সিনেমার টিকিট, মেরামত ও সার্ভিসিং সেবার খরচও বেড়ে যাবে। তদুপরি, উড়োজাহাজের টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে আকাশপথে যাত্রার খরচও বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে, মোবাইল ফোন এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার ওপরও নতুন কর আরোপ করা হয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে, ফলে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা আরো বেশি খরচ করতে বাধ্য হবেন। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা ইন্টারনেট বিলও বাড়াতে পারে।
এ সিদ্ধান্তের পেছনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত রয়েছে, যার কারণে সরকার এই সময়কার মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর শুল্ক-কর বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এমন সময়ে কর বাড়ানো হলো যখন দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এতে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষেরই নয়, মধ্যবিত্তদেরও আরও চাপ পড়বে। তাদের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে এবং নতুন শুল্ক-কর তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে সেবার মান খারাপ হতে পারে এবং ব্যবসার ক্ষতির পাশাপাশি গ্রাহকদের খরচও বাড়বে। তিনি সরকারের কাছে এই পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ। এর প্রভাব শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপরই পড়বে।
এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ, বিশেষত মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। নতুন কর ও শুল্ক বৃদ্ধির ফলে এই জনগণের দৈনন্দিন খরচ আরও বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের জীবনযাত্রার মানের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
repoter