ছবি: বাংলাদেশি শরণার্থীদের বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছেন এই পার্ভা গ্রামে
ভারতের মিজোরাম রাজ্য সরকার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আগত হাজার হাজার শরণার্থীকে এক জায়গায় স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছে। রাজ্য সরকারের মতে, শরণার্থীদের একত্রিত করে ত্রাণ বিতরণ এবং নজরদারি সহজতর হবে। তবে, শরণার্থীদের মধ্যে এটি নিয়ে কিছু উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বর্তমানে, মিজোরামে প্রায় ৪২ হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা ২,০০০ শরণার্থীও রয়েছেন।
মিজোরামে শরণার্থীদের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং স্থানান্তরের পরিকল্পনা
বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা বর্তমানে মিজোরামের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করছেন। মিজোরাম রাজ্য সরকার শরণার্থীদের একত্রিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে ত্রাণ বিতরণ এবং অন্যান্য সহায়তা সহজে করা যায়। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা লালমুয়ানপুইয়া পুন্তে সম্প্রতি এই পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। পুন্তে বলেন, শরণার্থীরা যাতে খেয়াল-খুশি মতো বিভিন্ন জায়গায় বসতি স্থাপন না করতে পারে, সেজন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন।
এখন পর্যন্ত, মিজোরামের দক্ষিণ অঞ্চলের লংৎলাই জেলায় ২০১৪ জন বাংলাদেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে, যারা মূলত বান্দরবান জেলার বাসিন্দা ছিলেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের কারণে তারা ভারত পালিয়ে এসেছেন। মিজোরামে তারা এখন দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে বসবাস করছেন।
শরণার্থীদের স্থানান্তরের উদ্বেগ
মিজোরাম সরকার যখন শরণার্থীদের এক জায়গায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে, তখন স্থানান্তরের প্রভাব নিয়ে শরণার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশি শরণার্থী বইলিয়ান থাংবম, যিনি লংৎলাই জেলার পার্ভা গ্রামে বসবাস করছেন, জানিয়েছেন যে শরণার্থীদের একত্রিত করা হলে তাদের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, "আমরা বর্তমানে ৪০টি পরিবার এখানে থাকি, যদি অন্য এলাকা থেকে আরও ৩০০ পরিবার এখানে আসে, তাহলে সমস্যা হবে। আমাদের কাজের সুযোগ সীমিত, এবং বাজারও ছোট।"
তিনি আরও জানান, শরণার্থীদের জন্য খাদ্য সাহায্য দান করা হলেও, তারা এখনও কিছু সামগ্রী প্রাপ্তি নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন। এই বিষয়ে মিজোরামের খাদ্য দফতর জানায়, ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কিছু খাদ্য সামগ্রী জেলা সদরগুলোতে পৌঁছানো হয়েছে, তবে আরও খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন।
মিজোরামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর ভূমিকা
মিজোরামে কার্যরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশন" (ওয়াইএমএ) শরণার্থীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সহায়তা প্রদান করে আসছে। সংগঠনটি শরণার্থীদের ত্রাণ বিতরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে এবং সরকারের কাছে তাদের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে। ওয়াইএমএ প্রেসিডেন্ট লালমাছুয়ানা জানান, "এই শরণার্থীরা আমাদের ভাই-বোন, আমাদের জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সহায়তা দিয়ে আসছি, কিন্তু সরকারের আরও সাহায্য প্রয়োজন।"
স্থানান্তরের খরচ এবং সামাজিক সমস্যা
লালমাছুয়ানা আরও জানান, শরণার্থীদের স্থানান্তর খরচ হতে পারে এবং এটি কারা বহন করবে, তা একটি প্রশ্ন। এছাড়া, যারা ভারতীয় আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে বাস করছেন, তাদেরকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করলে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, কারণ তারা অনেকেই নতুন স্থানে একা থাকতে পারে।
মিজোরাম সরকারের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন
মিজোরাম সরকারের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত কবে কার্যকর হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, শরণার্থীরা জানেন যে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা বর্তমানে নেই। মিজোরামের এই পরিকল্পনা নিয়ে শরণার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ রয়েছে, তবে স্থানান্তরের মাধ্যমে রাজ্য সরকার শরণার্থীদের ত্রাণ বিতরণ এবং নজরদারি আরও সহজ করতে চায়।
মিজোরামের সরকারের নতুন পরিকল্পনায় স্থানান্তরিত শরণার্থীদের বসবাসের জন্য চারটি গ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, সরকারের ত্রাণ বিতরণ এবং নজরদারি কার্যক্রম সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শরণার্থীদের জন্য আরও সহায়তা প্রয়োজন
মিজোরামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়াইএমএ’র সভাপতি লালমাছুয়ানা বলেন, "আমরা মিজোরাম সরকারকে অনুরোধ করেছি যেন শরণার্থীদের জন্য আরও খাদ্য সহায়তা এবং পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান করা হয়।" তিনি উল্লেখ করেন যে, মিজোরামে আসা শরণার্থীরা বাংলাদেশের বান্দরবান থেকে এসেছেন, এবং তাদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানে মিজোরাম সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সরকারের মানবিক সহায়তা
মিজোরাম সরকার এবং ওয়াইএমএ এই শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা, খাবার, ওষুধ, এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রী প্রদান করছে। তবে, শরণার্থীদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে তাদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে, বিশেষত যারা নতুন স্থানান্তরিত এলাকা থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবেন।
এই স্থানান্তরের ফলে, মিজোরাম সরকারের প্রতি শরণার্থীদের আশা, তারা যেন আরও কার্যকরভাবে সাহায্য এবং সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম হয়, যাতে শরণার্থীরা মানবিক দিক থেকে সুরক্ষিত এবং পুনর্বাসিত হতে পারে।
repoter