ছবি: সংগৃহীত ছবি
ভারতের দুটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে গেছে। মহারাষ্ট্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট একটি বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেছে, যেখানে ঝাড়খণ্ডে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ও কংগ্রেসের জোট ক্ষমতায় ফিরেছে। তবে মহারাষ্ট্রে বিজেপির জয় একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না, কারণ মে মাসে লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোট মহা বিকাশ আঘাদি উল্লেখযোগ্য ফলাফল করেছিল। কিন্তু পাঁচ মাসের ব্যবধানে, চিত্র একেবারে পালটে গেছে।
মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, ২৮৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি জোট পেয়েছে ২৩৬টি আসন এবং শিবসেনা (উদ্ভব ঠাকরে)-এনসিপি-কংগ্রেসের জোট পেয়েছে মাত্র ৪৮টি আসন। মে মাসে লোকসভা নির্বাচনে মহা বিকাশ আঘাদি জোট মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে ৩০টি আসন জিতেছিল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে সেই সাফল্য ফিরে আসেনি। পাঁচ মাসে এমন কী ঘটেছিল যা বিজেপির ফলাফলকে পুরোপুরি পাল্টে দিল?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি জোট লোকসভা নির্বাচনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিকল্পনা করেছে এবং সেই কারণে তারা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি ভোটারদের নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করেছে। উত্তর মহারাষ্ট্রে, যেখানে পেঁয়াজ চাষের সবচেয়ে বড় এলাকা, সেখানে কৃষকরা পেঁয়াজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। সরকার তাদের জন্য স্পষ্ট নীতি ঘোষণা করেছে, যা ভোটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিশেষ করে 'লাডলি বহিন যোজনা' প্রকল্পটি ছিল একটি ‘গেম চেঞ্জার’। এই প্রকল্পের অধীনে প্রতি মাসে নারীরা ১৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন, এবং যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার কম, তাদের ২১ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীরা এই সুবিধা পান। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করা এবং তাদের ভোটার হিসেবে আকর্ষণ করা বিজেপির বিজয়ের অন্যতম কারণ।
এই প্রকল্পের চালু হওয়ার পর নারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত অর্থ প্রদান শুরু হয়। অভিযোগ উঠেছে যে, সেই কারণে হরিয়ানার সঙ্গে মহারাষ্ট্রের ভোট একই সময়ে করানো হয়নি। তবে, বিজেপি বিরোধী জোটকে পরাস্ত করতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এতে মহাযুতি জোটের প্রতি মহিলাদের সমর্থন বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া, বিজেপির হিন্দুত্ব নীতি এবং বিভিন্ন জাতির ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ করার কৌশলও তাদের এই সাফল্য এনে দিয়েছে। লোেকসভা নির্বাচনের পরপরই 'লাডলি বহিন যোজনা' চালু করা হয়, যাতে ২.৫ কোটি নারীর অ্যাকাউন্টে একসাথে চার মাসের টাকা চলে আসে। আর বিজেপির ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ এবং ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ স্লোগানগুলো হিন্দু ভোটারদের একজোট করেছে। এই স্লোগানগুলো ছিল বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, যা ভোটারদের মধ্যে একাত্মতা তৈরি করেছে।
এই স্লোগানগুলোর প্রভাব পড়ে বৌদ্ধ এবং দলিত ভোটেও। প্রায় ৯ থেকে ১০ শতাংশ বৌদ্ধ ভোট বিরোধী মহা বিকাশ আঘাদি জোটের থেকে সরে এসে বিজেপির দিকে চলে গেছে। মারাঠা ও দলিত ভোট সুসংহত হওয়ায় এবং মুসলিম ভোটও বিজেপির দিকে বাড়ায়, এটি বিজেপির বিজয়ে সহায়ক হয়েছে।
বিরোধীদের ব্যর্থতার কারণ কি? মহা বিকাশ আঘাদি জোটের দলগুলির মধ্যে ঐক্যহীনতা, তাদের মধ্যে মতানৈক্য এবং নির্বাচনী ইস্তেহারে স্ববিরোধিতা পরাজয়ের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মহা বিকাশ আঘাদি যখন বিজেপির লাডলি বহিন যোজনার সমালোচনা করেছিল, তখন তারা নিজেদের ইস্তেহারে তিন হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা তাদের নিজেদের মধ্যে বৈপরীত্য তৈরি করেছে।
এছাড়া, মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের সময় 'বান্টেগে তো কাটেঙ্গে' এবং 'এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়' এই দুটি স্লোগান ছিল বিজেপির নির্বাচনী কৌশল, যা মূলত হিন্দু ভোটকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছিল। এই স্লোগানগুলোই বিজেপির বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এছাড়া, বিজেপি প্রধান নরেন্দ্র মোদীর নীতিমালা এবং জনপ্রিয়তা তাদের পক্ষে কাজ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মহারাষ্ট্রে বিজেপির বিজয় তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক কৌশলের ফল।
repoter