
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
মেহেরপুরের মুজিবনগরে অবস্থিত নির্মাণাধীন বাগানবাড়িতে গত ৪ জানুয়ারি রাতে অনলাইন ক্যাসিনোর শীর্ষ এজেন্ট মুরশিদ আলম লিপুর বিরুদ্ধে চতুর্থ দফা অভিযান চালায় পুলিশ। তবে লিপু সেখানে উপস্থিত না থাকায় অভিযানে কোনো সাফল্য আসেনি। মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাত ১২টার দিকে বাগানবাড়িটিতে অভিযান চালায়।
এটি ছিল ২০২৩ সালে মুরশিদ আলম লিপুর বিরুদ্ধে চারটি অভিযান। এর আগেও ২ সেপ্টেম্বর, ১১ অক্টোবর ও ৮ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী তার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল, তবে কোনোদিনই তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
মুরশিদ আলম লিপু বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ অনলাইন ক্যাসিনো এজেন্ট হিসেবে পরিচিত। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পল্টন থানায় ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে মেহেরপুরে অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেহেরপুর জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সম্প্রতি মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মাকসুদা আকতার খানম কালবেলাকে জানান যে, ভবিষ্যতে অনলাইন জুয়ায় সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হবে।
গত ২ সেপ্টেম্বর প্রথম দফা যৌথবাহিনীর অভিযানে লিপু অনুপস্থিত থাকায় আটজনকে আটক করা হয়, তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফা অভিযানে ১১ অক্টোবর আবারও লিপু কৌশলে পালিয়ে যান, তবে এ সময়ে গ্রেপ্তার হন ৪ জন ব্যক্তি।
তৃতীয় দফার অভিযানে ৮ ডিসেম্বর আবারও বাগানবাড়িতে অভিযান চালানো হলেও, লিপু ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। তবে, পুলিশ কিছু সন্দেহজনক উপকরণ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
অল্প সময়ে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া মুরশিদ আলম লিপু সম্প্রতি এক মেসেঞ্জার বার্তায় কালবেলাকে জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে একাধিক ব্যক্তি তার সঙ্গে চাঁদাবাজির চেষ্টা করেছে। লিপু দাবি করেছেন, চাঁদা না দেওয়ার কারণেই প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তোজাম্মেল আজম কালবেলাকে বলেন, "অনলাইন ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন এখন কার্যকরভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে অনলাইন জুয়া থেকে দ্রুত বিচারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত, এবং দোষী প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "অনলাইনে বেটিং অ্যাপসের বিজ্ঞাপন সরকারিভাবে বন্ধ করতে হবে, নইলে এই অপরাধমহামারি বন্ধ করা সম্ভব হবে না।"
মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে মুরশিদ আলম লিপু ও অস্ত্রের সন্ধানে শিবপুরের বাগানবাড়িতে অভিযান চালানো হয়, তবে লিপু সেখানে উপস্থিত না থাকায় পুলিশ ফিরে আসে।
সিআইডি জানায়, ২০২১ সালের নভেম্বরে মুরশিদ আলম লিপুর সিম থেকে দৈনিক গড়ে ১০ লাখ টাকা লেনদেন হতো। তিনি রাশিয়াভিত্তিক বেটিং ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে অনলাইনে জুয়া পরিচালনা করতেন, এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সিমের মাধ্যমে লেনদেনের কাজ করতেন।
মেহেরপুরের কিছু মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে সিআইডি জানিয়েছিল।
repoter