ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০৩:১০ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ রবিবার * প্রতিযোগী না হয়ে প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতিই নিজেদের: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম * জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারদের পাশে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক * ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যাচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল * শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে রবিবার ঈদ উদযাপিত হবে * “বাংলাদেশ কোরআনের উর্বর ভূমি” — পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় ধর্ম উপদেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা * চা শ্রমিকদের পাশে সিলেটের ডিসি — দুর্দশায় ত্রাণ নিয়ে হাজির প্রশাসন * সাত বছর পর পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন করছেন খালেদা জিয়া * মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা * আগামীকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ২ ঘণ্টার লেনদেন

মেঘনার তীরে অপরাধের সিন্ডিকেট: পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ

repoter

প্রকাশিত: ১১:৫৭:৩৪অপরাহ্ন , ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১১:৫৭:৩৪অপরাহ্ন , ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ

ছবি: সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরেছেন স্থানীয়রা। তার নেতৃত্বাধীন একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘ এক দশক ধরে মেঘনা নদী ও তীরবর্তী এলাকায় অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের মতে, ইলিশ সিন্ডিকেট, জমি দখল, পরিবহনে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বহু মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

পঙ্কজ দেবনাথ ২০১৪ সালে বরিশাল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তার নাম বারবার উঠে আসে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও নানা অভিযোগের কারণে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন, কিন্তু তাতে সাফল্য পাননি।

জমি ও চর দখলে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, পঙ্কজ দেবনাথ তার প্রভাব খাটিয়ে চরের জমি দখল করে অবৈধভাবে আয় করেছেন। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়নে খাসজমি দখল করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় করতেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাদের চাষাবাদ ও গবাদিপশু চরানোর জায়গাগুলো দখল করে পঙ্কজের অনুসারীরা নিজেদের দখলে রেখেছে। যারা এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, তাদের ভয় দেখানো হয়েছে কিংবা এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।

ধুলখোলার এক বাসিন্দা জানান, মেঘনার তীর থেকে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করা হতো এবং ঢাকায় পাঠানো হতো। প্রতিটি ড্রেজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া হতো। এই অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে ভাঙন বেড়ে গেছে, অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

ইলিশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শোষণ

মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পঙ্কজ দেবনাথের সিন্ডিকেট নিয়মিতভাবে কোটি কোটি টাকার ইলিশ অবৈধভাবে শিকার করেছে। জেলেরা জানান, সিন্ডিকেটের চাপে তারা নিষেধাজ্ঞার সময়ও মাছ ধরতে বাধ্য হতেন। জানপুর মাছঘাটে প্রতিদিন ৭০-৮০ লাখ টাকার ইলিশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি হতো। মাছঘাটের এক ম্যানেজার জানান, সিন্ডিকেট তাদের মাছ কম দামে কিনে নিত এবং বাজারে চড়া দামে বিক্রি করত।

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও দুঃখ

মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন তালুকদার অভিযোগ করেন, পঙ্কজ দেবনাথ ও তার অনুসারীরা গরিব মানুষের জমি দখল করে নিজেদের আয় বাড়িয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কথা বলায় অনেকে হুমকির মুখে পড়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, তার অপকর্মের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষ দল নয়, বরং পঙ্কজ দেবনাথের অপকর্ম সম্পর্কেই বেশি জানে।

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভ এতটাই বেশি যে তারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবি তুলেছেন। তারা মনে করেন, পঙ্কজ দেবনাথকে আইনের আওতায় আনা হলে মেঘনার তীরবর্তী মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরবে।

দুর্নীতি ও হত্যার অভিযোগ

পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগও পাওয়া গেছে। ঢাকায় একাধিক বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে সম্পত্তি থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, তার এসব সম্পদের উৎস হলো ইলিশ সিন্ডিকেট, জমি দখল ও বালুমহালের অবৈধ আয়।

তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগও উঠেছে। ২০১৪ সালে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় একটি পেট্রলবোমা হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এই হামলার নির্দেশ পঙ্কজ দেবনাথই দিয়েছিলেন।

শাস্তির দাবি

মেঘনা নদীর তীরবর্তী জেলে শফিক গাজী বলেন, ‘তার অপরাধের বিচার চাই। আমাদের জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে আইনের আওতায় নিতে হবে।’ স্থানীয়রা আশা করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পঙ্কজ দেবনাথ ও তার সিন্ডিকেটের কার্যক্রম বন্ধ হবে এবং তাদের জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরবে।

সরকার পরিবর্তনের পর থেকে পঙ্কজ দেবনাথ তার নির্বাচনী এলাকায় আর দেখা দেননি। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

repoter