
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে যে, মধ্য ডিসেম্বরের পর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে এবং শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। তবে চলতি মাসে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা বেশি, আর জানুয়ারিতে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, এ সময় কুয়াশার আধিক্যও থাকবে, যা শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে রেকর্ড হয়েছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ে, যেখানে ২২ নভেম্বর ১৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। জলবায়ু উপাত্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে সাধারণত দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফোরকাস্টিং কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম জানান, আগামী তিন দিনে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে না। তবে ১০ ডিসেম্বরের পর তাপমাত্রা আবার বাড়তে পারে এবং মধ্য ডিসেম্বরের পর তাপমাত্রা আরও কমে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ডিসেম্বর মাসে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাধারণত ১০ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে, আর এ সময় তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে পারে বিশেষ কিছু অঞ্চলে। তিনি বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, পশ্চিম-মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকতে পারে। অন্যদিকে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকতে পারে।
‘চেঞ্জেস ক্লাইমেট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধের রচয়িতা আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, ডিসেম্বর মাসে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলেও জানুয়ারি মাসে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে। এসময় কুয়াশার আধিক্যও থাকতে পারে, যা তাপমাত্রা কমানোর পাশাপাশি শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে তুলবে। গত বছর জানুয়ারিতে একটানা ১৮ দিন কুয়াশা ছিল, যা শীতের অনুভূতিকে আরও তীব্র করেছে।
কুয়াশা সম্পর্কে সাবেক আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ড. সমরেন্দ্র কর্মকার জানান, বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত বাংলাদেশের আকাশে প্রচুর পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে, যা কুয়াশা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে। ভারতের উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও দিল্লির আকাশে কুয়াশার একটি চাদর তৈরি থাকে, যা বাংলাদেশে এসে বিস্তৃত হয়। এ কারণে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় এবং সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে, তাপমাত্রা বেশি থাকলেও শীতের অনুভূতি বেড়ে যায়।
আবহাওয়াবিদ ও ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (নোয়ামি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, কুয়াশার কারণে তাপমাত্রা ভূপৃষ্ঠে বিকিরিত হতে পারে না, ফলে তাপমাত্রা বাড়লেও শীতের অনুভূতি বাড়ে। কুয়াশার চাদর সাধারণত ২৫০০ থেকে ৩৫০০ ফুট পর্যন্ত থাকে, যা সূর্যের আলো প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে বিমানবন্দরগুলোতে বিমান ওঠানামায় সমস্যা হতে পারে।
যখন কোনো অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তখন সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হয়। যদি তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে সেখানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আকার নেয়।
সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হলেও জানুয়ারি মাসটি দেশের সবচেয়ে শীতলতম মাস হিসেবে পরিচিত। এ সময় উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শীতল বাতাস প্রবাহিত হয়, যার কারণে তাপমাত্রা কমে যায় এবং শীতের তীব্রতা বাড়ে।
repoter