
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
দেশে প্রবাসী আয় মার্চ মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাঙাভাব লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।
এই রেমিট্যান্স প্রবাহের ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারে। আজ রবিবার (৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত দেশের গ্রস বা মোট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫,৬২৫.৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ২ হাজার ৫৬২ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রণীত হিসাব পদ্ধতি 'ব্যালেন্স অব পেমেন্টস ম্যানুয়াল সিক্স' বা বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা কম দেখানো হয়েছে। এই পদ্ধতির আওতায় বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০,৪৬০.৫২ মিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৪৬ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
এর আগে গত ২৭ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে তথ্য প্রকাশ করেছিল, সেখানে বলা হয়, সেদিন পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৫,৪৪০.৮৮ মিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। বিপিএম-৬ অনুযায়ী তখন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২০,২৯৬.৯৩ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ২ হাজার ২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।
তুলনামূলকভাবে দেখা যাচ্ছে, মাত্র দশ দিনের ব্যবধানে গ্রস রিজার্ভে ১৮৪.৫০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিপিএম-৬ ভিত্তিক রিজার্ভেও প্রায় ১৬৩.৫৯ মিলিয়ন ডলার প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রমজান মাস এবং আসন্ন ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীদের বাড়তি রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতার কারণেই মার্চে এই উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ লক্ষ্য করা গেছে। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাময়িকভাবে হলেও কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এসময় আরও জানায়, রেমিট্যান্সে এ ধরনের ইতিবাচক প্রবাহ অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিতে পারে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে হলে রপ্তানি আয়ে স্থিতিশীলতা ও বৈদেশিক বিনিয়োগে গতি আনার প্রয়োজন রয়েছে।
সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাব প্রকাশ করছে। এতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন সহজ হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বর্তমানে দেশে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় যেমন আমদানি ব্যয়, ঋণ পরিশোধ এবং সরকারের বৈদেশিক দায় মেটানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, তেমনি রেমিট্যান্সসহ অন্যান্য উৎস থেকে মুদ্রা প্রবাহ সচল রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে মার্চ মাসে প্রবাসী আয়ের এই উল্লম্ফন এবং তদসংশ্লিষ্ট রিজার্ভ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক ধারা হিসেবে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থনৈতিক মহল।
repoter