ছবি: ছবি: সংগৃহীত
লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ বন্ধে আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চারটি লেবানিজ সূত্র।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং হিজবুল্লাহর উপস্থিতি হ্রাস করার শর্তে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। এ চুক্তির অধীনে ওই এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ বাড়াবে লেবাননের সেনাবাহিনী।
যুদ্ধবিরতির পটভূমি ও অগ্রগতি
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর সংঘর্ষ বন্ধে একটি সমন্বিত প্রস্তাব তৈরি হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের খালি করা এলাকাগুলোতে লেবাননের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি এক বিবৃতিতে জানান, আলোচনার অগ্রগতি সঠিক পথে রয়েছে এবং একটি চুক্তি খুবই কাছাকাছি।
সমঝোতার পথে বাধা ও সমাধান
লেবাননের সংসদের ডেপুটি স্পিকার এলিয়াস বউ সা’ব বলেছেন, যুদ্ধবিরতির তত্ত্বাবধান কারা করবে, তা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সসহ পাঁচ দেশের অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে আর বড় কোনো বাধা নেই বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
একজন পশ্চিমা কূটনীতিক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র লেবানন সরকারের কাছে নিশ্চিত করেছে যে যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসতে পারে।
ইসরায়েলি আপত্তি ও কট্টরপন্থীদের বিরোধিতা
যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন, কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির এর বিরোধিতা করেছেন। তিনি এই চুক্তিকে "একটি গুরুতর ভুল" আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “এখন হিজবুল্লাহকে সামরিকভাবে পেছনে ঠেলে দেওয়ার এবং ধ্বংস করার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ।”
সংঘর্ষের বর্তমান অবস্থা
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়েছে। রোববার লেবানন থেকে ইসরায়েলের দিকে প্রায় ২৫০টি প্রজেক্টাইল ছোঁড়া হয়। তবে বেশিরভাগই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আটকাতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী বৈরুতসহ সন্দেহভাজন হিজবুল্লাহ স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক তদারকি ও সমঝোতা চুক্তি
লেবাননের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতিত্বে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করা হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স ছাড়াও আরও তিনটি দেশ থাকবে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসতে আর বেশিক্ষণ বাকি নেই। এটি বাস্তবায়িত হলে দুই মাসের জন্য হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ বন্ধ থাকবে এবং উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
এই যুদ্ধবিরতি শুধুমাত্র লেবানন ও ইসরায়েলের জন্য নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
repoter