
ছবি: কবি হেলাল হাফিজ। ছবি : সংগৃহীত
বাংলা সাহিত্যের দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
জানা গেছে, বেলা ২টার দিকে শাহবাগের সুপার হোস্টেলের ওয়াশরুমের দরজা খুলে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর দ্রুত তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
কবির জানাজার নামাজ আগামীকাল শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কবি হেলাল হাফিজ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি গ্লুকোমা, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস এবং স্নায়ুজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি চালিয়ে গেলেও শারীরিক দুর্বলতা ক্রমেই তার সৃষ্টিশীলতাকে ব্যাহত করেছিল।
হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায়। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কবিতার বই যে জলে আগুন জ্বলে তাকে এনে দেয় অসাধারণ জনপ্রিয়তা। বইটি এখন পর্যন্ত ৩৩ বার মুদ্রিত হয়েছে, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তার কবিতা বাংলাদেশের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে তার বিখ্যাত কবিতা নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় থেকে পঙক্তি— “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”— আন্দোলনের সময় স্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
কবিতার পাশাপাশি সাংবাদিকতাও ছিল হেলাল হাফিজের পেশা। তিনি দৈনিক যুগান্তর সহ বিভিন্ন পত্রিকায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তার কবিতার ভাষায় দ্রোহ ও প্রেমের এক অসামান্য মেলবন্ধন পাওয়া যায়, যা তাকে পাঠকসমাজে অমর করে তুলেছে।
২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন হেলাল হাফিজ। এর আগে তিনি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ আরও নানা সম্মাননা লাভ করেন। তার প্রয়াণে সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
repoter