
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি এ সময় শিশুদের ওপর সহিংসতা এবং তাদের মৃত্যুর ঘটনায় শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত অভ্যুত্থানে ১,৪০০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় শতাধিক শিশু নিহত হয়েছে। ইউনিসেফ এই মৃত্যুর অনেকের বিষয়ে ইতোমধ্যে রিপোর্ট করেছে এবং কতজন শিশু মারা গেছে তা স্পষ্ট করার জন্য কাজ করছে। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিটি শিশুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি এবং এই ঘটনাগুলোর প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।”
বিবৃতিতে ইউনিসেফ নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার চিত্রও তুলে ধরেছে। রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “এ সময় নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং অনেক ধরনের জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।” তিনি আরও জানান, “শিশুরাও সহিংসতা থেকে রেহাই পায়নি; অনেক শিশু হত্যা, আহত, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং অত্যাচারিত হয়েছে।”
উল্লেখযোগ্য তিনটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে ইউনিসেফ জানায়, ধানমন্ডিতে ১২ বছর বয়সী এক শিশু ধাতব গুলি থেকে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণজনিত কারণে মারা যায়। নারায়ণগঞ্জে, ছয় বছর বয়সী একটি কন্যাশিশু তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া, ৫ আগস্টে আজমপুরে ১২ বছর বয়সী এক শিশুর ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশের গুলিতে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এসব ঘটনা ইউনিসেফের পক্ষ থেকে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এইসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউনিসেফ শিশুদের সুরক্ষা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল, নীতিনির্ধারক এবং জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইউনিসেফ তাদের বিবৃতিতে বাংলাদেশের শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
প্রথমত, যেসব শিশু প্রাণ হারিয়েছে তাদের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, যেসব শিশু এখনও আটক অবস্থায় রয়েছে, তাদের পুনর্বাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা। তৃতীয়ত, শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বিকভাবে সুষ্ঠু সংস্কারের জন্য কাজ করা।
এই বিষয়ে ইউনিসেফ আরও বলেছে, "আমরা সব রাজনৈতিক নেতা, দল এবং নীতিনির্ধারকদের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একজোট হয়ে কাজ করতে আহ্বান জানাচ্ছি।" ইউনিসেফ মনে করে, আইনগত কাঠামো এবং ন্যায়বিচারের সংস্কার বাংলাদেশের শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংস্থাটি তার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন শিশুসুরক্ষা সম্পর্কিত আইন এবং বিচার ব্যবস্থার সংস্কার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে। তারা দাবি করেছে, শিশুদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও বেআইনিভাবে আটক রাখার ক্ষেত্রে স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে মিলিয়ে সাজানো জরুরি। এছাড়া, শিশুদের জন্য বিশেষ আদালত ও শিশু-সংবেদনশীল তদন্ত ব্যবস্থার জন্য কাজ করতে হবে।
ইউনিসেফ আরও জানিয়েছে, "বিচারের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন ডাইভারশন প্রোগ্রাম, প্রবেশন এবং পুনর্বাসনমুখী বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।" এভাবে বাংলাদেশের শিশুদের নিরাপত্তা এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে সংস্থাটি আশা প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি বড় পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে, যেখানে পুলিশ, আদালত ও বিচার ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণে কাজ হচ্ছে। ইউনিসেফ মনে করে, তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ তৈরি করার সুযোগ রয়েছে এবং এটি নিশ্চিত করতে হবে।
repoter