
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এই দলিল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। এর মাধ্যমে চলমান অন্তর্বর্তী সরকারকে গণ-অভ্যুত্থানের সরকার হিসেবে বৈধতা দেওয়া হবে এবং নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের ভিত্তি উপস্থাপন করা হবে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের সংবিধানকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো হবে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় এই ঘোষণাপত্র দালিলিকভাবে তা প্রতিষ্ঠা করবে।
ঘোষণাপত্রে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে শুরু করে ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা উঠে আসবে। এতে দ্বিতীয় রিপাবলিকের ভিত্তি এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ থাকবে।
আয়োজনে অংশ নেবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক, আন্দোলনে নিহতদের পরিবার, আহত ছাত্ররা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। তবে ঘোষণাপত্রটি কার মাধ্যমে পাঠ করা হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। সম্ভাব্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আহত ছাত্রদের প্রতিনিধি, কিংবা শহীদ পরিবারের কেউ।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিল ঘোষণা করা হবে। নতুন ঘোষণাপত্রে সমতা, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারকে মূলনীতি হিসেবে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নাগরিক কমিটির সদস্য মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক আহসান বলেছেন, এই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের দ্বিতীয় রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেবে। তিনি আরও জানান, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। দ্বিতীয় রিপাবলিকের ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সব জাতিগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার পথে অগ্রসর হওয়া হবে।
ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার শাসনকে নব্য বাকশাল এবং ফ্যাসিবাদী শাসন হিসেবে উল্লেখ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রকে প্রাসঙ্গিক করে নতুন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে। নাগরিক কমিটির সদস্যরা আরও বলেন, অভ্যুত্থানের সরকারকে বৈধতা দেওয়ার মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে লিখিত দালিলিক রূপ দেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, বাহাত্তরের সংবিধান গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে। নতুন ঘোষণাপত্রে তা বাতিল করে মুজিববাদী সংবিধানের অবসান ঘোষণা করা হবে। শহীদ মিনার থেকে এক দফার আন্দোলনের স্থান থেকে মুজিববাদী সংবিধানের সমাপ্তি ঘটানো হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানিয়েছেন, এই ঘোষণাপত্র নতুন সিস্টেমের রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশের কাঠামো এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এতে থাকবে। এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রা শুরু হবে।
৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র পাঠ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আয়োজকরা জানান, ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের উপনিবেশিক প্রভাব এবং গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে থাকা অন্যান্য দিকগুলো স্পষ্ট করা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ঘোষণাপত্র শুধু একটি দালিলিক দলিল নয়, বরং অভ্যুত্থানের কারণ ও প্রেক্ষাপটের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে এক দফার আন্দোলন পর্যন্ত সব বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আহ্বায়ক হাসনাত আরও বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি মানুষ যারা ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছেন, তারা ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে একত্রিত হবেন। নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষার ঘোষণা সেখান থেকে দেওয়া হবে।
repoter