ঢাকা,  শুক্রবার
১৮ এপ্রিল ২০২৫ , ১০:০৭ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* খাগড়াছড়িতে অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত * বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় বৈঠক: ১৫ বছর পর পুনঃশুরু সম্পর্কের নতুন দিগন্ত * তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ ফুলবাড়ীতে, ভোগান্তিতে সাধারণ ক্রেতারা * আওয়ামী লীগের মতো দলে সাকিবের যোগ দেওয়া ঠিক হয়নি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব * রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রধান বাধা আরাকান আর্মি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা * বিডিআর হত্যাকাণ্ড: তদন্তে সহায়তা চেয়ে জাতীয় স্বাধীন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি * ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে কঠিন হবে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য * আলোচনায় অসন্তুষ্ট কারিগরি শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা * চীন থেকে অর্থ আনার অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে এনবিআরের দুই কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক অবসরে * ঢাকার চারপাশে গড়ে উঠছে ব্লু নেটওয়ার্ক: পানি সম্পদ উপদেষ্টা

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা: বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে, ইন্টারপোলকে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ

repoter

প্রকাশিত: ১২:০০:৫৬পূর্বাহ্ন, ১০ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১২:০০:৫৬পূর্বাহ্ন, ১০ এপ্রিল ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ সাবেক ১০ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত রেড নোটিশ জারির বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আয়োজনে একটি মতবিনিময়সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. তাজুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, সাইমুম রেজা তালুকদার, তামিম সিয়েরালিওন, মো. মিজানুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান তরফদার ও আব্দুল্লাহ আল নোমান।

চিফ প্রসিকিউটর জানান, ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ৩৩৯টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ২২টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাগুলোর ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৪ জন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং ৮৭ জন পলাতক রয়েছেন।

এই ১৪১ জন আসামির মধ্যে বেসামরিক ব্যক্তি রয়েছেন ৭০ জন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য (পুলিশ ও র‌্যাব) ৬২ জন এবং সামরিক বাহিনীর বরখাস্ত বা অবসরপ্রাপ্ত ৯ জন। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ব্যক্তির জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

মতবিনিময়সভায় অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা 'টপ কমান্ডার' এবং যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের বিচার করবো। সুপিরিয়র হুকুম থাকলেও যারা বাস্তবে গুলি করেছে, লাশে আগুন দিয়েছে এবং দাফন করতে দেয়নি, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। কারণ, যারা এই অপরাধের পরিকল্পনা, ডিজাইন, নির্দেশ দিয়েছে তারাই মূল অপরাধী।"

তিনি আরও বলেন, “রুয়ান্ডা, সিয়েরালিওনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আদালতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ সেনার পরিবর্তে শুধু শীর্ষ ১০-১২ জন কমান্ডারের বিচার হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও সেই পথেই এগোতে হবে।”

এ সময় চিফ প্রসিকিউটর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “সঠিক মাত্রায় বিচার করা না হলে রাষ্ট্রকে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কারণ বিচার অনন্তকাল চলতে পারে না। আমরা চাই রাষ্ট্রকে একটি স্থিতিশীল অবস্থানে নিয়ে যেতে এবং ভিকটিমদের বিচার পেতে সহযোগিতা করতে।”

তিনি জানান, যেসব মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে সেগুলোর মধ্যে চারটি মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। এসব মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন শিগগিরই ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে।

এদিকে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির অনুরোধপত্রে যেসব সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন—দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মো. আলী আরাফাত এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

এ ছাড়া মতবিনিময়সভায় একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি জানান, গুমের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে রাজধানীর উত্তরায় একটি গোপন বন্দিশালা থেকে বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি ওই গোপন বন্দিশালাটি শনাক্ত করার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে তার অনুসন্ধান চলে।

তার ভাষ্যমতে, বন্দিশালাটি ছিল একটি বৃহত্তম গোপন কারাগার। সেখানে যারা গুম হয়ে বছরের পর বছর বন্দি ছিলেন, তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে বন্দিশালার ম্যাপ তৈরি করা হয়। বন্দিদের স্মৃতির উপর ভিত্তি করে শনাক্ত করা হয় বন্দিশালার ঘর, টর্চার সেল, বাথরুম, সাউন্ড প্রুফ কক্ষসহ অন্যান্য কাঠামো।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, বন্দিশালার ভেতরে প্রবেশের সময় একটি বাথরুমের দেয়ালে বিশেষ স্ক্যান করে দেখা যায়, সেটি বাইরে থেকে বন্ধ করা ছিল। ভেঙে ঢুকলে সেখানে তিনটি নির্জন টর্চার রুম পাওয়া যায়। রুমের মধ্যে ছিল ভাঙাচোড়া ফার্নিচার, কাপড়, আবর্জনা ইত্যাদি।

তৃতীয় দিন আবর্জনার মধ্যে একটি নীল বালতি পাওয়া যায়, যার ভেতরে ছিল তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, এবং ধুলাবালি। যখন সেগুলো ঢালা হয়, তখন দেখা যায় পাঁচটি বড় আকারের বোমা, যেগুলোর সঙ্গে টাইমার ও তার লাগানো ছিল।

পরদিন, ২৬ জানুয়ারি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। ২৭ জানুয়ারি তারা ঘটনাস্থলে এসে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই বোমাগুলোর কোনো একটি বিস্ফোরিত হলে পুরো ভবনটি ধ্বংস হয়ে যেত।

চিফ প্রসিকিউটর জানান, এ বিষয়ে আরও কিছু তথ্য রয়েছে যা জনসম্মুখে প্রকাশ করা যাচ্ছে না, কারণ তা বিচারিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গোপন রাখতে হচ্ছে।

মতবিনিময়সভার শেষে প্রসিকিউশন শাখার কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন যে, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এই বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা পেতে ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাইব্যুনাল।

repoter