
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জুডিশিয়ারি রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, যদি বিচারব্যবস্থাকে সঠিকভাবে রক্ষা করা যেত, তবে অনেককেই দেশ ছাড়তে হতো না এবং অনেকে জেলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেন না। তিনি ১১ বছর পর ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এই মতামত ব্যক্ত করেন। সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার একটি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অ্যাসোসিয়েটস।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তার বক্তব্যে প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় আগে দেশ ছাড়ার পেছনের ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে তিনি দুই সপ্তাহের জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরে সেখানে দীর্ঘ ১১ বছর থাকতে হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর বোমা হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, "যদি আমরা জুডিশিয়ারিকে রক্ষা করতে পারতাম, তবে এই জাতি অনেক আগেই স্বৈরশাসনের হাত থেকে মুক্তি পেত।"
তিনি জুডিশিয়ারির স্বাধীনতা রক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আজ বার ও বেঞ্চ উভয়ের পাশাপাশি আপামর জনসাধারণের একটি অভিন্ন লক্ষ্য হওয়া উচিত—জুডিশিয়ারিকে কখনো পরাধীন হতে দেওয়া যাবে না। এটি রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা যদি শক্তিশালী থাকেন, তাহলে আজ হোক বা কাল হোক, দেশ অবশ্যই ভালো হতে বাধ্য।” তিনি ব্রিটিশ শাসনামলের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, "ব্রিটিশরা আমাদের শাসন-শোষণ করেছে, কিন্তু তারাও আইনকে সম্মান করত। কিন্তু বর্তমানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে একজন রাজনীতিক রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে উধাও করে দেওয়া হয়। এমন ঘটনা অতীতে ছিল না।"
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, “জুডিশিয়ারি রক্ষা করতে না পারায় অনেক নেতাকর্মীকে জেলে যেতে হয়েছে বা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি আমরা এটা রক্ষা করতে পারি, তবে আমাদের জাতি অনেক সমস্যার সমাধান পাবে।”
তিনি উপস্থিত আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের জুডিশিয়ারিকে স্বাধীন রাখতে হবে এবং এটি যেন কোনোভাবেই প্রভাবিত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন বার গড়ে তুলতে হবে।”
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারাও জুডিশিয়ারির স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, "একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কেবল আইনজীবীদের জন্য নয়, বরং এটি পুরো জাতির জন্যই অপরিহার্য।"
অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, “জুডিশিয়ারি রক্ষা করা একটি জাতীয় দায়িত্ব। আমরা যদি এর স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজে বসবাস করতে পারবে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এটি ন্যায়বিচারের মূল স্তম্ভ এবং জাতির অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ছাড়া একটি জাতি সঠিক পথে এগোতে পারে না। এটি রক্ষা করতে হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।”
এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি আইনজীবীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠেছিল, যেখানে তারা জুডিশিয়ারি রক্ষার গুরুত্ব এবং এর স্বাধীনতা সুরক্ষার বিষয়ে তাদের মতামত ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, “আমরা যদি আমাদের বিচারব্যবস্থাকে রক্ষা করতে পারি, তবে জাতি অগ্রগতির পথে অনেকদূর এগিয়ে যাবে। বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা পুনঃস্থাপন করতে পারলে মানুষ ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করবে, আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।”
অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে জুডিশিয়ারি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা সুরক্ষার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। অংশগ্রহণকারীরা একমত পোষণ করেন যে, একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা জাতীয় উন্নতির মূল ভিত্তি।
repoter