ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:২৭ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

জাতিসংঘের প্রতিবেদন: ক্ষমতাচ্যুত সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্য গোপন করেছে

repoter

প্রকাশিত: ০৯:২৪:২৪অপরাহ্ন , ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আপডেট: ০৯:২৪:২৪অপরাহ্ন , ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের এক সত্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশের সাবেক সরকার ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে গণবিক্ষোভ চলাকালীন সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং সরকার এই ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) জানায়, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত সরকারি বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের সহিংসতা তদন্তের কোনো বাস্তব প্রচেষ্টা দেখা যায়নি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী কিছু হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। পুলিশ নিহতদের মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে গোপনে সরিয়ে ফেলেছে, পরিবারের কাছে ফেরত দেয়নি, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জাতিসংঘ ১২ ফেব্রুয়ারি ‘জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে ওএইচসিএইচআর জানায়, পুলিশের বিশেষ শাখা ও র‍্যাবকে গোপনে অতিরিক্ত গোলাবারুদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাদের গুলিবর্ষণের হিসাব সরকারি নথিতে না আসে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণ বা নির্যাতনের কোনো তদন্ত হয়নি। তৎকালীন কর্মকর্তারা দাবি করেন যে ‘সংকটময় পরিস্থিতির’ কারণে কোনো ভুক্তভোগী আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেননি।

তবে জাতিসংঘের মতে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনই তদন্ত শুরু করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সরকার কোনো জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেনি, বরং সত্য গোপনের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই, এনএসআই), পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আহতদের চিকিৎসারত অবস্থায় থাকা হাসপাতালগুলোতে উপস্থিত হয়ে নির্যাতনের প্রমাণ মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা নথি জব্দ করেছে।

এছাড়া, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতদের বিষয়ে জবাবদিহিতা দাবি করায় আইনজীবী, সাংবাদিক, ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।

ওএইচসিএইচআর জানায়, আলোচিত কিছু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডিজিএফআই সদস্যরা ভুক্তভোগীদের পরিবার ও তাদের আইনজীবীদের ফোন করে বা সরাসরি দেখা করে হুমকি দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সম্পৃক্ততার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও শত শত নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অথচ ভিডিও ফুটেজসহ অন্যান্য প্রমাণ থেকে স্পষ্ট যে, পুলিশই তাকে হত্যা করেছে।

ওএইচসিএইচআর আরও জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে বিএনপি এবং জামায়াতের সদস্যদের বিক্ষোভকারীদের হত্যা ও আহত করার জন্য দায়ী করেন, যদিও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ছিল স্পষ্ট।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দিয়েছিল।

বর্তমানে পলাতক থাকা তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক নেতাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। তবে তিনি এই ঘটনায় ‘বিরোধী উসকানিদাতা’ ও ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেন।

তদন্তের আওতায় কেবল ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে সংঘটিত মৃত্যু, সহিংসতা, ধ্বংসযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতি’ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা কেবল বিক্ষোভকারীদের কর্মকাণ্ডের ওপর একতরফা দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল। অথচ নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে এই তদন্ত কমিটি কোনো অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি, এমনকি তাদের কার্যক্রমের কোনো লিখিত রেকর্ডও পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

কমিশন ৩০ জুলাই একটি অস্পষ্ট বিবৃতি দেয়, যেখানে ঘটনাকে ‘খুবই দুঃখজনক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং গণগ্রেপ্তার না করার আহ্বান জানানো হয়।

repoter