ছবি: ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা রাজধানী পরিবহনের অন্তত ২৭টি বাস আটকে রেখেছে। অভিযোগ উঠেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বাসের সহকারী অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে। এরপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে আরিচাগামী লেনে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহামিনা দিতি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটক থেকে তিনি রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে উঠেছিলেন। বাসের নম্বর ছিল ঢাকা মেট্রো-ব- ১২৩০৪৪। বাসে ওঠার পরই সহকারী তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেন। তিনি হাফ ভাড়া হিসেবে পাঁচ টাকা দিতে চাইলে সহকারী তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তিনি ফুল ভাড়া ১০ টাকা দিলেও সহকারী তাকে কটু কথা শোনাতে থাকেন।
ঘটনাটি এখানেই শেষ হয়নি। নবীনগর স্মৃতিসৌধ এলাকায় বাসটি অযাচিতভাবে থামিয়ে রাখা হলে দিতি বাসের সহকারীকে এটি না করার অনুরোধ জানান। তবে সহকারী তখনও তার প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ অব্যাহত রাখেন। দিতি বিষয়টি তার বন্ধুদের জানালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন এবং রাজধানী পরিবহনের বাসগুলো আটকে দেন।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের একটি দল বাস থামিয়ে একপাশে সরিয়ে নিচ্ছে এবং বাসের চাবি সংগ্রহ করছে। বাসের যাত্রীদের তারা নামিয়ে দিচ্ছেন, ফলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এক যাত্রী আনিসুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তিনি প্রতিদিন মিরপুর থেকে কালিয়াকৈর যাতায়াত করেন এবং প্রায়ই এমন ধরনের আন্দোলনের সম্মুখীন হন। এর ফলে যাত্রীরা যে দুর্ভোগে পড়ছেন, তা নিয়ে কেউ ভাবছে না।
আন্দোলনের সময় একটি বাস থামতে না চাইলে এক শিক্ষার্থী বাসের ধাক্কায় পায়ে আঘাত পান। এই ঘটনায় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা বাসটির চালককে ধরে মারধর করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে এবং বাস কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আবু সৈয়দ জিন্নাহ জানান, বিষয়টি নিয়ে বাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে, তবে এটি সমাধান হওয়া দরকার।
বাস আটকের ফলে মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। অনেক যাত্রীকে বিকল্প যানবাহন খুঁজতে হয়েছে। এ ধরনের আন্দোলন একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলে, অন্যদিকে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, বাসের সহকারী বা চালকদের অসৌজন্যমূলক আচরণ প্রায়ই ঘটে এবং এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তারা বলেছেন, যতক্ষণ না বাস কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।
এদিকে বাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, এমন পরিস্থিতি প্রায়ই ঘটে, এবং এটি শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং অন্য যাত্রীদের জন্যও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য, এ ধরনের ঘটনার জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজট এবং অসন্তোষ বাড়ছে। বাস কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
repoter