ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি একটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্মরণসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থনমূলক মন্তব্য করেছেন। এই ঘটনার জেরে তাকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক প্রতিনিধি আনিসুর রহমান সজল অভিযোগ করেন, ইউএনও আল মামুন বলেছেন, “আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, আজ অথবা আগামীকাল।” তার এই বক্তব্যের অভিযোগ ওঠার পরপরই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে ইউএনওকে বদলির নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “আজকের মধ্যেই তাকে প্রত্যাহার করা হবে এবং আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে ফিরে আমি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করব।”
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদরপুরের ইউএনও আল মামুন। তিনি বলেন, “আমি কখনোই এমন মন্তব্য করিনি। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা।”
অভিযোগকারী আনিসুর রহমান সজল জানান, সম্প্রতি সদরপুরে এক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণসভায় ইউএনও আল মামুন প্রধান অতিথি ছিলেন। সেখানে বক্তৃতার সময় দিল্লি না ঢাকার প্রশ্নে সজল বলেছিলেন, “দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না।” এরপর, সজলের অভিযোগ অনুযায়ী, ইউএনও তাকে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে নিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, আজ অথবা আগামীকাল।”
সজলের এই বক্তব্যের পরপরই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সরাসরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ফরিদপুর জেলা প্রশাসককে ইউএনও আল মামুনকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে বলা হয়।
ইউএনও’র মন্তব্যকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে প্রশাসনের নিরপেক্ষ অবস্থানের সংঘাত হিসেবে দেখছেন। তবে আল মামুনের সমর্থকরা দাবি করেছেন, এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র এবং অভিযোগটি সত্য নয়।
সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান জানান, প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ করতে পারেন না। তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব।”
ইউএনও আল মামুনের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এই ঘটনা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতার বিষয়ে জনগণের আস্থা বজায় রাখতে এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সিনিয়র সচিব।
এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ অভিযোগকারীর দাবিকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ ইউএনও’র বিরুদ্ধে এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মনে করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা প্রশাসনিক পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কর্মকর্তাদের উচিত তাদের কাজের জায়গায় রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে বিরত থাকা এবং কোনো পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন না করা।
এই ঘটনার পর ইউএনও আল মামুনকে সদরপুর থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত চালানো হবে বলে জানা গেছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হতে পারে।
এই ঘটনা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং দায়িত্বশীলতার বিষয়টি আবারও সামনে এনেছে। সরকার নিশ্চিত করতে চায় যে, দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন এবং তাদের বক্তব্য বা কাজের মাধ্যমে কোনো পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ পাবে না।
repoter