ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ইমাম হোসেন তাঈম হত্যা মামলায় যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বুধবার সকালে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল একই সঙ্গে আসামিকে আগামী ১২ ডিসেম্বর আবারও হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে।
মামলার শুনানিতে গ্রেপ্তার আদেশ
আসামির আইনজীবী মোহাম্মদ আবুল হাসান জানান, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। বুধবার ট্রাইব্যুনালে ওকালতনামা দাখিল করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য সময় চাওয়া হয়েছে, যা আদালত মঞ্জুর করেছেন।
তিনি আরও বলেন, "আমাদের বিশ্বাস, মামলায় সঠিক প্রক্রিয়ায় প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আমার মক্কেলের নির্দোষ প্রমাণিত হবে।" তবে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মামলার প্রেক্ষাপট
মামলার তথ্য অনুযায়ী, শহীদ ইমাম হোসেন তাঈমকে আন্দোলনের সময় কাছ থেকে গুলি করা হয় এবং পরে তাকে থানায় নিয়ে মুখমণ্ডল বিকৃত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে ওসি আবুল হাসানের বিরুদ্ধে।
২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আবুল হাসানকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
নৃশংস ঘটনার বিবরণ
মামলার নথি অনুসারে, আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ইমাম হোসেন তাঈম। পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে থানায় নেওয়া হয়। সেখানে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং তার মুখমণ্ডল বিকৃত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং ন্যায়বিচারের দাবি তোলে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাপক আলোচনা ও নিন্দার মুখে পড়ে প্রশাসন।
ট্রাইব্যুনালের পদক্ষেপ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশেষ নজর দেয় এবং মামলাটি গুরুত্ব সহকারে পরিচালনা করছে। বুধবার শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়।
আদালত জানায়, "প্রথমিক তদন্তে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। মামলার চূড়ান্ত শুনানির আগে তাকে কারাগারে রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো।"
পরবর্তী পদক্ষেপ
ট্রাইব্যুনাল আগামী ১২ ডিসেম্বর আবারও মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে। এই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তের আইনজীবী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে পারবেন।
রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, তারা সব ধরনের তথ্য-প্রমাণ প্রস্তুত করছে, যা অভিযুক্তের অপরাধ নিশ্চিত করতে পারে।
ইমাম হোসেন তাঈম হত্যাকাণ্ডের এই মামলায় আদালতের সিদ্ধান্তকে বিভিন্ন পক্ষ ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই ঘটনায় দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে। সংগঠনগুলো বলছে, "এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জ্বলন্ত উদাহরণ।"
সাবেক ওসি আবুল হাসানের গ্রেপ্তার আদেশ সরকারের প্রতি চাপ আরও বাড়িয়েছে, কারণ মামলাটি দেশে আইনের শাসনের গুরুত্বকে পুনরায় সামনে এনেছে।
ইমাম হোসেন তাঈম হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া এখন নজরকাড়া অবস্থায় রয়েছে। এই মামলার রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করতে পারে। এর পাশাপাশি, এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের উপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে।
repoter