
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
জার্মানির ৬০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার) বয়কট করার। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে আসা এই প্রতিষ্ঠানগুলো ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ এবং গণতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রম সমর্থনের অভিযোগ এনে এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
সম্প্রতি ইউরোপে ডানপন্থি চরমপন্থার উত্থান এবং উগ্র জাতীয়তাবাদকে উৎসাহিত করার অভিযোগ উঠেছে এক্সের বিরুদ্ধে। জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার আরবিবি এবং ফেডারেল অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি কমিউনিকেশন এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্ল্যাটফর্মটি এখন আর তথ্যভিত্তিক আলোচনা ও মুক্ত আদান-প্রদানের জন্য নিরাপদ স্থান নয়। বরং কথিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে সেখানে ঘৃণা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র সিলকে এঙ্গেল জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা প্ল্যাটফর্মটি দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছি। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে কয়েক মাস ধরে আমাদের সক্রিয়তা আগের মতো ছিল না। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটি বন্ধ করে দেব, কারণ এক্স আর স্বচ্ছ তথ্যের আদান-প্রদানের জায়গা নয়।”
জার্মানির দুটি প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন—উনিফাইড সার্ভিস সেক্টর ইউনিয়ন (ভার্ডি) এবং এডুকেশন অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিয়ন (জিইডব্লিউ)—প্রায় ১৫ বছর পর এক্স ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এই সংগঠনগুলো এক্সকে চরম ডানপন্থি মতামত প্রচার, ঘৃণা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, প্ল্যাটফর্মটি গণতন্ত্রবিরোধী আচরণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
ইলন মাস্কের কিছু সাম্প্রতিক মন্তব্য এই বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছে। মাস্ক এক্সে একটি পোস্টে ডানপন্থি রাজনৈতিক দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-কে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, “এএফডি-ই জার্মানিকে বাঁচাতে পারে।” তার এই মন্তব্যের কারণে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জার্মান নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে।
পাশাপাশি, গত বছরের নভেম্বরে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার ভেঙে পড়ার পর মাস্ক একটি বিতর্কিত টুইট করেন, যেখানে তিনি শলৎসকে বোকা বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে মাস্ক এএফডি দলের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
এক অনলাইন আলোচনায় এএফডি নেতা এলিস ওয়েইডেলের সঙ্গে মাস্ক বলেন, “যদি কেউ বর্তমান পরিস্থিতিতে অসন্তুষ্ট হন, তবে তাদের উচিত পরিবর্তনের জন্য ভোট দেওয়া। আমি দৃঢ়ভাবে এএফডিকে ভোট দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এটি একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ।”
এ ধরনের মন্তব্যের কারণে ইলন মাস্ক এবং তার মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম এক্সকে জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানও সম্প্রতি এক্স বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে, একে তারা “মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর হাতিয়ার” হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে জার্মানির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো এক্স থেকে সরে আসার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের মতে, এটি কেবল নৈতিক অবস্থান নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
repoter