
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর বিরুদ্ধে মিরপুর, রূপনগর ও পল্লবী এলাকায় প্রায় ৭০০ একর সরকারি জমি দখল, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যে এই অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। টিমটি ইলিয়াস মোল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ইলিয়াস মোল্লাহ মিরপুরে সরকারি জমি দখল করে সেখানে বস্তি, অস্থায়ী মার্কেট ও দোকান তৈরি করেছেন। এসব স্থাপনা থেকে তিনি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ দিয়ে মাসিক ভাড়া ও চাঁদা আদায় করতেন। এছাড়াও, মিরপুরের বিল-ঝিলের অঘোষিত মালিক ছিলেন তিনি। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা ৫০ সদস্যের সন্ত্রাসী বাহিনী এই জমিগুলো রক্ষা করত বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইলিয়াস মোল্লাহ দুয়ারীপাড়ার ৪৭৩টি সরকারি প্লট দখল করে সেখান থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন। এই প্লটগুলো থেকে তিনি চারবার উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে প্লট প্রতি দুই থেকে চার লাখ টাকা করে আদায় করেছেন। এছাড়াও, এলাকার মার্কেট, দোকান ও ফুটপাত থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করা হতো, যা সরকারি তহবিলে জমা দেওয়া হতো না।
২০০৮ সালে সরকারি প্লট থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ইলিয়াস মোল্লাহর বাহিনী পুনরায় এই জমি দখল করে নেয়। আদালত কয়েকবার সরকারের পক্ষে রায় দিলেও তিনি এই জমিগুলো পুনরায় দখলে নেন।
ইলিয়াস মোল্লাহর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি তুরাগ নদের কিছু অংশ ভরাট করে বস্তি তৈরি করেছেন, যেখানে অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মিরপুর-১ নম্বরের উত্তর বিশিল মৌজায় চিড়িয়াখানার কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত জমিও তার সমর্থকদের দখলে রয়েছে।
২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় ইলিয়াস মোল্লাহর বার্ষিক আয় যথাক্রমে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ও ৩ কোটি ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। তবে স্থানীয়রা তার সম্পদের হিসাবকে হাস্যকর বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, ইলিয়াস মোল্লাহর প্রকৃত সম্পদ তার হলফনামায় উল্লিখিত সম্পদের চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি।
দুদকের অনুসন্ধান টিম ইতিমধ্যে ব্যাংক, বীমা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, তিতাস গ্যাস ও ঢাকা ওয়াসার মতো প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য চেয়েছে। এই তদন্তের মাধ্যমে ইলিয়াস মোল্লাহর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
repoter