
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
গ্রিনল্যান্ড, উত্তর আটলান্টিকের বরফাচ্ছাদিত দ্বীপ, যদিও ভৌগোলিকভাবে উত্তর আমেরিকার অংশ, তবে রাজনৈতিকভাবে এটি ডেনমার্কের অধীন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এই দ্বীপটি 'কিনে নেওয়ার' আগ্রহ প্রকাশের পর থেকেই দেশটিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনগণ, বিশেষত ইনুইটদের মধ্যে স্বাধীনতা এবং মার্কিন প্রভাব নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে।
গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুউকে সাম্প্রতিককালে প্রচুর আন্তর্জাতিক মিডিয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ট্রাম্পের 'গ্রিনল্যান্ড কেনার' প্রস্তাবের পর দ্বীপটি আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনামে চলে এসেছে। এই দ্বীপের কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে মার্কিন ব্যবসায়ী টম ড্যান্স বলেছেন, এটি উত্তর আমেরিকার সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রবেশপথ হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য এবং একে আমেরিকার হাতে নেওয়া উচিত।
এদিকে, গ্রিনল্যান্ডের স্থানীয় জনগণ, বিশেষত ইনুইটরা, ডেনমার্কের অধিকার নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে ক্ষোভ পোষণ করে আসছে। তারা মনে করে, দেশটির স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত এখানকার মানুষের হাতে থাকতে হবে, ডেনমার্ক বা আমেরিকার নয়। গ্রিনল্যান্ড প্রতি বছর ৫০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান পায় ডেনমার্ক থেকে, তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি স্বাধীনতা অর্জনের পথে একটি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
গ্রিনল্যান্ডের ইতিহাসে ইনুইটদের প্রতি ডেনিশ শাসনের অন্ধকার অধ্যায়ও এখনো তাদের মনে তাড়া করে। হ্যানস এগেড নামক একটি মূর্তি, যা ১৮ শতকে ইনুইটদের খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করার একটি প্রতীক, স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কুপানুক ওলসেন নামের এক স্থানীয় ইনফ্লুয়েন্সার বলেন, “এটি আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক হওয়া উচিত, আমাদের নিজস্ব নায়কদের গর্ব করা উচিত, নয়তো বিদেশী শাসকদের মূর্তি।”
গ্রিনল্যান্ড ১৯৭৯ সালে স্বায়ত্তশাসন লাভ করলেও, ২০০৮ সালে এটি আরো ক্ষমতা অর্জন করে। তবে এখানকার জনগণের স্বাধীনতার পথটি সহজ নয়, কারণ এটি ডেনমার্কের পার্লামেন্টের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল। আগামী মাসের নির্বাচনে এই স্বাধীনতার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
গ্রিনল্যান্ডে কিছু নেতৃবৃন্দ, যেমন কুপানুক ওলসেন, ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান, তবে অন্যদের মতে, তারা এখনও ডেনমার্কের সাহায্য ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে চলতে সক্ষম নয়। আক্কালু জেরিমিয়াসেন, অটাসুত পার্টির নেতা, বলেন, “আমরা এখনো প্রস্তুত নই, তবে অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকা চলবে না।”
গ্রিনল্যান্ডের ৫৭,০০০ জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ ইনুইট। তাদের ইতিহাসে ডেনমার্কের শাসন এবং আধিপত্যের বিরোধিতার ফলে তারা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য লড়াই করছে। তবে তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ মনে করে, স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, কারণ এটি আর্থিক এবং প্রতিরক্ষার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত 'গ্রিনল্যান্ড কেনার' পরিকল্পনা মার্কিন রাজনৈতিক প্রভাবকে আরো বৃদ্ধি করতে পারে, তবে স্থানীয়রা তা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত নয়। গ্রিনল্যান্ডের আয়তন এবং খনিজ সম্পদ, যেমন ইউরেনিয়াম এবং রেয়ার আর্থ মিনারেলস, বর্তমানে চীন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে প্রভাব বজায় রাখতে আগ্রহী।
গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার আন্দোলন এবং ট্রাম্পের প্রস্তাবনা এখন এক অবস্থা তৈরি করেছে, যেখানে স্থানীয় জনগণ তাদের ভবিষ্যত নিয়ে অস্থির। ১ নভেম্বরের নির্বাচনে স্বাধীনতা প্রশ্নে জনগণের মতামত পরিষ্কার হতে পারে, এবং এটি হয়তো এই উত্তেজনা শেষ করতে সাহায্য করবে। তবে এর জন্য গ্রিনল্যান্ডের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি সত্যিই স্বাধীন হতে প্রস্তুত, নাকি তাদের অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা চাহিদা ডেনমার্কের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে বাধ্য করবে।
repoter