
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সিরিয়া নিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমি এবং এর আশপাশের এলাকা দখলে নিয়েছে ইসরায়েল। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পর এই অঞ্চলটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নির্দেশ দেন। আসাদ বিদ্রোহীদের চাপের মুখে ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ত্যাগ করে রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পরপরই এই পদক্ষেপ নেয় ইসরায়েল।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি রোববার এক প্রতিবেদনে জানায়, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৭৪ সালে একটি নিয়ন্ত্রণ রেখা প্রতিষ্ঠার চুক্তি হয়েছিল। তবে আসাদের পতনের পর সেই চুক্তি কার্যত বাতিল হয়ে যায় এবং সিরিয়ার সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকা ছেড়ে চলে যায়। নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য সীমান্তে সম্ভাব্য শত্রু বাহিনী প্রতিষ্ঠা হতে দেওয়া যাবে না। এ কারণেই গোলান মালভূমি ও এর আশপাশের এলাকাগুলো দখলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নেতানিয়াহুর নির্দেশ অনুসারে ইসরায়েলি সেনারা ওফানিয়া, কুনেইত্রা, আল-হামিদিয়াহ, সামদানিয়া, আল-ঘরবাইয়া এবং আল-কাহতানিয়া এলাকায় জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। এসব গ্রাম গোলান মালভূমির কাছাকাছি অবস্থিত, যেখানে বহু সিরিয়ান বাসিন্দা বসবাস করেন। ইসরায়েলি বাহিনী এ এলাকাগুলোতে অবস্থানরত সিরিয়ানদের ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এবং পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জটিল করবে। গোলান মালভূমি দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত একটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এটি সিরিয়ার একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যা ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধের পর থেকে আংশিকভাবে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে।
বাশার আল-আসাদের পতনের ফলে সিরিয়ায় একটি রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে ইসরায়েল তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইসরায়েলের এই দখলদারি পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ একে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামূলক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকেই এটিকে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
এদিকে সিরিয়ার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দেশটির পতিত সরকারের একাংশ এই পদক্ষেপকে তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, যা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের প্রভাব শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
repoter