ছবি: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে গ্রাফিতিগুলো দেখা যায়, সেগুলোতে ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, "যতই আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাই, দেয়ালজুড়ে এসব গ্রাফিতি দেখা যায়, এবং মনে হয় এগুলোতে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা ভাষা পেয়েছে।" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এ ধরনের গ্রাফিতি দেখার পর তার মনে হয়, তিনি যে দায়িত্ব পালন করছেন, তা আদৌ জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথেষ্ট কিনা।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব দর্শন দিবস উপলক্ষে দর্শন বিভাগে অনুষ্ঠিত "গণঅভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দার্শনিক ভিত্তি" শীর্ষক এক বিশেষ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষার মূল কাজ হচ্ছে শিশুকে সামাজিকীকরণ করা।” তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুকে এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত যাতে তারা লিখিত ভাষা এবং গাণিতিক ভাষায় দক্ষ হয়ে ওঠে। লিখিত ভাষা এমন একটি আবিষ্কার যা মানুষের ইতিহাস পাল্টে দিয়েছে এবং মানবজ্ঞানকে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করেছে।
তিনি আরও বলেন, "প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সফল দেশগুলোর মধ্যে একটি বৈশ্বিক ঐক্যবদ্ধতা ছিল। আমরা যখন স্বাধীন হয়েছিলাম, তখন আমাদেরও এমন একটি স্বপ্ন ছিল। কিন্তু আজকের দিনে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রায় ১৪টি ধারায় বিভক্ত হয়েছে, যার ফলে ঐক্যের ভিত্তি তৈরি হচ্ছে না।" তিনি বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি সার্বজনীন কারিকুলাম প্রতিষ্ঠার গুরুত্বও তুলে ধরেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের প্রথম চ্যালেঞ্জে ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছিল রক্ত দিয়ে। তবে, দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশ গড়া এবং সমাজ রূপান্তরের প্রক্রিয়া, যা এখনও চলমান। তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার চলমান রয়েছে।
অধ্যাপক রাইন বলেন, "রাজনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরের যে লড়াই, সেটা শুধু আত্মহুতি দিয়ে জয় করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সততা, নিষ্ঠা, বুদ্ধি এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা।" তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মতাদর্শগত বিভাজন তৈরি হয়েছে। কিন্তু এসব মতাদর্শিক ভেদ একান্তবাদের দিকে চলে যাওয়ার কারণে রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়া সফল হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, "আমরা গণঅভ্যুত্থানের সময়ে একত্রিত হয়েছিলাম, কিন্তু এখন বিভিন্ন দল ও মতের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। এই মতাদর্শিক ভেদ দূর করতে পারলে রাষ্ট্র সংস্কার সফল হবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, যারা সরকার গঠন করে, তারা দেশের ভেতরে একটি উপনিবেশ স্থাপন করে, যেখানে বেশিরভাগ জনগণ উপেক্ষিত থাকে।"
অধ্যাপক রাইন দাবি করেন, "এই উপনিবেশটি সাধারণ জনগণের জন্য ক্ষতিকর, যেখানে তাদের খাদ্য, বাসস্থান, নিরাপত্তা এবং মৌলিক অধিকার অনিশ্চিত। এটাই আধুনিক গণতন্ত্রের বড় সংকট।"
এ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, দর্শন বিশেষজ্ঞ, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। বক্তারা গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করেন।
repoter