ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০২:৫৩ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ রবিবার * প্রতিযোগী না হয়ে প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতিই নিজেদের: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম * জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারদের পাশে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক * ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যাচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল * শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে রবিবার ঈদ উদযাপিত হবে * “বাংলাদেশ কোরআনের উর্বর ভূমি” — পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় ধর্ম উপদেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা * চা শ্রমিকদের পাশে সিলেটের ডিসি — দুর্দশায় ত্রাণ নিয়ে হাজির প্রশাসন * সাত বছর পর পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন করছেন খালেদা জিয়া * মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা * আগামীকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ২ ঘণ্টার লেনদেন

গাজীপুরে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ১২০০ ট্রেনযাত্রী, রেললাইন বেঁকে যাওয়ায় বনলতা এক্সপ্রেস থেমে যায়

repoter

প্রকাশিত: ০৫:৫৫:১১অপরাহ্ন , ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

আপডেট: ০৫:৫৫:১১অপরাহ্ন , ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় রবিবার দুপুরে ঘটে গেল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনা। ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১২০০ যাত্রী অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন, যখন রেললাইন বেঁকে যাওয়ায় দ্রুতগামী ট্রেনটি থেমে যায়। স্থানীয়দের এবং রেল কর্মীদের সতর্ক বার্তার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে। স্থানীয়রা জানান, মাত্র আধা ঘণ্টা আগেই একটি ট্রেন একই রেলপথ অতিক্রম করেছে। পরে রেলের নিরাপত্তাকর্মীরা এসে দেখতে পান যে ঢাকা-গাজীপুর ডুয়েল গেজ আপলাইনের একটি লাইন প্রায় ২০ মিটার জুড়ে বাঁকা হয়ে গেছে এবং স্লিপারের লক ভেঙে সরে গেছে। তারা দ্রুত বিষয়টি লক্ষ্য করে লাল পতাকা টানিয়ে সংকেত দেন, যা ট্রেনটির গতি রোধ করতে সহায়তা করে।

রেল কর্তৃপক্ষের মতে, রেলের নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের নিয়মিত টহলের সময় রেললাইনের এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনটি লক্ষ্য করেন। এরপর তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে লাল পতাকা টানিয়ে ট্রেনচালকদের সতর্ক করার চেষ্টা করেন। তবে, বনলতা এক্সপ্রেসের চালক সেই সময় কোনো বার্তা পাননি এবং ট্রেনটি গতি নিয়ে ধীরাশ্রম স্টেশন অতিক্রম করতে থাকে। কয়েক মিটার অগ্রসর হওয়ার পর, ট্রেনচালক রেললাইনের ওপর লাল পতাকা দেখে বিপদের আশঙ্কা করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে ব্রেক প্রয়োগ করেন।

ট্রেনটি বেঁকে যাওয়া রেললাইন থেকে মাত্র ৪০ মিটার দূরে থেমে যায়। এতে ১২০০ যাত্রীর প্রাণ অল্পের জন্য রক্ষা পায়। এ ঘটনার ফলে ঢাকার সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যোগাযোগে এক গুরুত্বপূর্ণ দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও রেল চলাচলে সাময়িক অসুবিধার সৃষ্টি হয়।

বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, ধীরাশ্রম এলাকায় এসে রেল লাইনের উপর লাল পতাকা দেখতে পাওয়ার পর, তারা বেলা ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ট্রেনটি থামানোর সিদ্ধান্ত নেন। নিচে নেমে আসার পর তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে, রেললাইনের স্লিপারের লক খুলে তা বাঁকা হয়ে সরে গেছে। কীভাবে এমনটি ঘটেছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিষ্কার নয় এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে টেকনিক্যাল দল আসার পর ঘটনার পুরো প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিশদে জানা যাবে।

জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনের মাস্টার হানিফ আলী বলেন, "ধীরাশ্রম এলাকায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে আপাতত ঢাকা-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের আপলাইনটি বন্ধ রয়েছে। অপর লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে, তবে মেরামতের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই লাইন দিয়ে কোনো ট্রেন চলাচল করতে পারবে না।"

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ওই এলাকায় একটি ট্রেন প্রায় আধা ঘণ্টা আগেই অতিক্রম করেছে এবং তখন রেললাইনটি স্বাভাবিক ছিল। রেলের কর্মীরা যখন নিয়মিত টহল দিচ্ছিলেন, তখন তারা রেললাইনের স্লিপার ভেঙে বাঁকা হয়ে যাওয়া দেখতে পান। নিরাপত্তা রক্ষীরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেন এবং সেইসঙ্গে লাল পতাকা টানিয়ে দেন, যা বনলতা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের প্রাণ রক্ষা করতে সহায়তা করেছে। ট্রেনটি থামানোর পর যাত্রীদের মধ্যেও কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে তারা দ্রুত নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সকলেই শান্ত হয়ে যান।

ট্রেনের যাত্রীদের একজন, সুমন হোসেন, বলেন, "আমরা ট্রেনটি থামার পর বুঝতে পারি যে কোনো একটা বড় ঘটনা ঘটতে পারত। ট্রেন থামার পর সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল, কিন্তু পরে যখন জানলাম যে রেললাইন বাঁকা হয়ে গেছে, তখন বুঝতে পারি যে আমাদের ভাগ্য ভালো ছিল। নিরাপত্তাকর্মীরা সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে আমরা বড় বিপদে পড়তাম।"

এ ঘটনাটি রেল নিরাপত্তার ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। অনেক যাত্রী ও স্থানীয়রা রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ধীরাশ্রমের এই ঘটনা যদি অল্পের জন্য এড়ানো না যেত, তাহলে এটি হয়তো একটি বড় ধরনের বিপর্যয় হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে রেল কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং স্থানীয় নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্কতার ফলে এই ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ঘটনার পর দ্রুত রেললাইনের মেরামতের কাজ শুরু করেন এবং ঘটনাস্থলে টেকনিক্যাল দল পাঠানো হয়। তারা এই ঘটনার পেছনে কোনো টেকনিক্যাল সমস্যার সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধান করছেন। কর্মকর্তারা জানান, রেললাইনটি মেরামত করার পর বনলতা এক্সপ্রেস আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে এবং এ ঘটনার কারণে কোনো দীর্ঘমেয়াদি বিলম্ব বা অসুবিধা হবে না।

এই ঘটনার পরপরই রেল চলাচলের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উপর প্রশ্ন উঠেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভবিষ্যতে আরও কঠোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা ও সতর্কতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

repoter