ছবি: ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাছা থানাধীন তারগাছ এলাকায় শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বাস চাপায় নিহত হয়েছেন স্থানীয় এক নিরাপত্তা কর্মী। এই ঘটনার পর ক্ষুব্ধ হয়ে পোশাকশ্রমিকরা দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকটি বাসে ভাংচুর চালায়।
নিহত নিরাপত্তাকর্মীর নাম মুন্না (৫৫)। তিনি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। জানা গেছে, শনিবার রাত ৮টার দিকে মুন্না গাছা এলাকায় অবস্থিত অনন্ত গার্মেন্ট কারখানার নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কারখানা ছুটি হওয়ার পর শ্রমিকদের নিরাপদে মহাসড়ক পারাপারের জন্য তিনি লাল নিশান হাতে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে সাহায্য করছিলেন।
এসময় ঢাকাগামী আজমেরী পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মুন্নার মৃত্যু হয়। মুন্নার মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় পোশাকশ্রমিকরা ওই বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করে। পাশাপাশি তারা আরেকটি বাসেও আগুন ধরিয়ে দেয় এবং আজমেরী পরিবহনের আরও কয়েকটি বাস আটকে ভাংচুর চালায়। শ্রমিকদের প্রতিবাদ ও ক্ষোভের মুখে পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে এবং মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা এতটাই বাড়ে যে, তারা আরও কয়েকটি বাসে ভাংচুর চালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায় দমকল বাহিনী। তবে, দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে শ্রমিকরা তাদের বাধা দেয়, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী মোহাম্মদ রাশেদ জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে এবং শ্রমিকদেরকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, নিহত মুন্নার লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এ ঘটনার পর থেকে মহাসড়কের যান চলাচল ব্যাহত হয়ে পড়ে, ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। শ্রমিকদের সহিংসতার কারণে পরিবহন ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে, নিহত মুন্নার পরিবার ও তার সহকর্মীরা শোকাহত। নিহত কর্মীর পরিবারের সদস্যরা অভিযুক্ত বাসচালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, মুন্না নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন, এবং এই ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি হওয়া উচিত।
শ্রমিকরা তাদের নিরাপত্তা ও সড়কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করতে থাকেন। তাদের দাবি, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
গাজীপুরের এই ঘটনা কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার প্রতি গভীর নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে। শ্রমিকদের সহিংস প্রতিবাদ এবং সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে চলমান আলোচনা সমাজে একটি বড় প্রশ্ন রেখে যায়।
repoter