
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র – নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রতিবাদকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হবে।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইহুদিদের বিরুদ্ধে 'সন্ত্রাসমূলক হুমকি, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম এবং সহিংসতা' মোকাবিলায় মার্কিন বিচার বিভাগকে নির্দেশনা দিয়ে ট্রাম্প এই নির্বাহী আদেশটি জারি করেছেন। গত বছর গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইসরায়েলের নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল।
এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বহু মার্কিন রাজনীতিবিদ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের 'হামাস সমর্থক', 'ইহুদিবিদ্বেষী' এবং 'যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী' বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি ফিলিস্তিনপন্থি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করবেন।
নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, 'যারা জিহাদপন্থি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের জন্য আমাদের সতর্ক বার্তা: ২০২৫ সালে আমরা তোমাদের খুঁজে বের করব এবং দেশছাড়া করব।' তিনি আরও বলেন, 'সব হামাস সমর্থকদের ভিসা দ্রুত বাতিল করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চরমপন্থা ছড়িয়ে পড়েছে, যা আমাদের দমন করতে হবে।'
এই নির্বাহী আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি ক্যারি ডিসেল রয়টার্সকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এখানে অবস্থানরত সকল ব্যক্তির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, যা বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতামতের কারণে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হলে তা অসাংবিধানিক হবে।'
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করা সংগঠন ‘দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন’ (CAIR) এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার পরিকল্পনা করছে।
আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মায়া বেরি বলেছেন, এই আদেশ ইসরায়েলের সমালোচনাকে ইহুদিবিদ্বেষের সঙ্গে একীভূত করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, মানবাধিকার সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গোষ্ঠী এই আদেশের বিরোধিতা করে বলছে যে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক নীতিমালার পরিপন্থী এবং একে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখা উচিত। শিক্ষার্থীরা এবং অধিকার সংগঠনগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি নিয়ে এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন দেশ এই আদেশের ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষার পরিবেশ আরও প্রতিকূল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
repoter