ছবি: ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট এলাকায় একটি কারখানায় এয়ার ফ্রেশনার রিফিল করার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১০ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে দ্রুত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে নিয়ে আসা হয়, যেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। রবিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ বিস্ফোরণটি ঘটে।
দগ্ধদের অবস্থান:
বিস্ফোরণের ফলে দগ্ধ শ্রমিকদের নাম জানা গেছে। তারা হলেন – বিপ্লব (২৮), আরিফ (১৭), হাসান (২২), শাওন (২৪), হোসাইন (১৮), চঞ্চল (২৬), তামজিদ শেখ (৪০), তন্ময় (২৫), নুর ইসলাম (২৩) এবং আল আমিন (২৪)। এদের মধ্যে বেশ কিছু শ্রমিকের শরীরের বড় অংশে পুড়ে গেছে। তবে এখনো দগ্ধদের শরীরের কত শতাংশ বার্ন হয়েছে, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তাদের অবস্থা বর্তমানে সংকটাপন্ন হলেও চিকিৎসকরা তাদের সর্বাত্মক চিকিৎসা দিচ্ছেন।
কারখানার সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এয়ার ফ্রেশনার রিফিল করার সময় একটি বিস্ফোরণ ঘটে, যার ফলে এসব শ্রমিক আহত হন। তবে বিস্ফোরণের সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও, শুরুতেই অগ্নিদুর্ঘটনার সূত্রপাত কোথায় এবং কীভাবে ঘটেছিল তা জানা যায়নি।
এয়ার ফ্রেশনার রিফিলের সময় রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি ও সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করার কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বায়ুর সঙ্গে মিশে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের অস্থিরতা বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।
দগ্ধ শ্রমিকদের দ্রুত উদ্ধার করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে। ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানিয়েছেন, "নারায়ণগঞ্জ থেকে ১০ জন দগ্ধ শ্রমিককে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে, তবে শরীরের কত শতাংশ বার্ন হয়েছে, তা এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, "শ্রমিকদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। আমরা তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।"
এমন ঘটনায় আহতদের পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন এবং সেখানে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিস্ফোরণের কারণ উদঘাটন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
এছাড়া, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারখানার কার্যক্রমে আরও সতর্কতা অবলম্বন এবং নিয়মনীতি প্রয়োগ করার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হবে এবং ভবিষ্যতে কোনও ধরণের বিপদ এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি জরুরি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন কারখানার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে, সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা কর্মসূচি নেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।
এয়ার ফ্রেশনার রিফিল করার সময় সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট এলাকায় ঘটিত এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ১০ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর তাদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারখানাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
repoter